কবীর প্রকট দিবস, পরমাত্মা কবীর সাহেবের এই ধরিত্রী-তে প্রকট হওয়া উপলক্ষে পালন করা হয়। ভগবান কবীর সাহেব ভারতবর্ষের উত্তরপ্রদেশে কাশী শহরে লহরতারা নামক সরোবরে এক পদ্ম ফুলের উপর অবতরিত হয়েছিলেন। নীরু-নীমা ওনাকে ওখান থেকে তুলে ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন, যাদেরকে ওনার পালক পিতা-মাতা বলা হয়। লোকবেদের কারণে কবীর পরমেশ্বর জী কে পুরো দুনিয়া একজন তাঁতী, কবি অথবা সন্ত মনে করে। পবিত্র বেদ ও কবীর পরমেশ্বর জীর মহিমা গায়। পবিত্র ঋগ্বেদ মন্ডল 9 সুক্ত 94, মন্ত্র 1 এবং মন্ডল 9 সুক্ত 96 মন্ত্র 17 থেকে 20 -তে লেখা আছে যে সেই পরমেশ্বর এই ধরিত্রীতে সশরীরে আসেন এবং নিজের জ্ঞান দোঁহা বা লোকক্তির মাধ্যমে পুরো দুনিয়াকে বলেন। জানুন কবীর পরমেশ্বর জীর প্রকৃত জীবন কাহিনী এবং লীলা সমূহ। যখন কবীর জী এই ধরিত্রীতে প্রায় 600 সাল পূর্বে অবতরিত হয়েছিলেন।
কবীর প্রকট দিবস কেন পালন করা হয়?
কবীর প্রকট দিবস কবীর পরমেশ্বর জীর প্রায় 600 সাল পূর্বে কাশীতে লহরতারা সরোবরে অবতরণ হওয়া উপলক্ষে পালন করা হয়। কবীর পরমেশ্বর যিনি আমাদের সকল জীব আত্মাদের জনক এবং সতলোক ও সমস্ত সৃষ্টির রচনহার, যিনি এই ধরিত্রীতে (মৃত্যুলোকে) সমস্ত জীব আত্মাদের কে তত্ত্বজ্ঞান বোঝানোর জন্য এবং মুক্তির পথ দেখানো ও সত্য ভক্তি মার্গ বলার জন্য এসেছিলেন, যাতে আমরা সকল আত্মারা সৎলোক প্রাপ্তি করতে পারি।
কবীর পরমেশ্বর জী একজন তাঁতী রূপে জীবন ব্যতিত করেছিলেন এবং আমাদের সবাইকে এটা দেখানোর জন্য করেছিলেন যে, ভগবান প্রাপ্তির জন্য কারো ধন, দৌলত এবং উচ্চ জাতির প্রয়োজন হয় না। কবীর পরমেশ্বর জীর না তো জন্ম হয়, না ওনার মৃত্যু হয়। কবীর পরমেশ্বর জীর 120 বছরের লীলাতে উনি অনেক চমৎকার করেছেন এবং দেখিয়েছিলেন যে তিনিই পূর্ণ পরমাত্মা।
ভগবান কবীর সাহেব জীর কাশী-তে নিবাস :- সংক্ষিপ্ত জীবনী
কবীর পরমেশ্বর জী 1398 (বিক্রমী সংবত্ 1455) সালে জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে লহরতারা সরোবরে এক পদ্ম ফুলের উপর নবজাত শিশু রূপে প্রকট হয়েছিলেন। ওই দিন অষ্টানন্দ ঋষি, যিনি রোজ ওই সময়ে স্নান করে নিজের সাধনা করতেন, উনি আকাশ থেকে একটি গোলা আসতে দেখেন যার প্রকাশে ওনার চোখ অন্ধকার হয়ে যায়। চোখ বন্ধ করার পরে উনি একটি বালকের রূপ দেখতে পান, যখন দ্বিতীয়বার উনি চোখ খুললেন ততক্ষনে সেই প্রকাশ লহরতারা সরোবরে-র এক কোনায় মিশে গিয়েছিল।
অষ্টানন্দ ঋষি নিজের গুরুদেব স্বামী রামানন্দ জীর নিকটে এই জিজ্ঞাসা করতে যান, যে এটা কি আমার ভক্তির কোন উপলব্ধি, না কি এটা আমার কোনো ভ্রম। স্বামী রামানন্দ জী বললেন, এটা না তো আপনার কোনো ভক্তির উপলব্ধি, না আপনার কোনো ভ্রম। এমন গতিবিধি উপরের লোক থেকে যখন কোনো অবতার অথবা সিদ্ধপুরুষ এই পৃথিবীতে আসে তখন হয় আর তিনি মায়ের গর্ভে এসে শরণ নেন। স্বামী রামানন্দ জীর অতটা জ্ঞান ছিল না, যে সেই পরমেশ্বর কখনো জন্ম নেন না।
ভগবান কবীর জী কর্তৃক শিশু রূপে নীরু এবং নীমাকে প্রাপ্ত হওয়া।
নিঃসন্তান দম্পতি নীরু আর নীমা লহরতারা সরোবরে ব্রহ্ম মুহুর্তের সময় স্নান করতে যেতেন। নীরু আর নীমা ওই একই জন্মে হিন্দু ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী গৌরীশংকর আর সরস্বতী ছিলেন। ওনাদেরকে বলপূর্বক মুসলমান বানানো হয়েছিল। এজন্য, ওনারা কাপড় বোনা (তাঁতীর কাজ) শুরু করে দিয়েছিলেন।
ওই দিন স্নান করতে যাওয়ার সময় রাস্তায় নীমা কাঁদছিলেন আর নিজের ভগবান শিবের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে যদি! তাদেরও একটা সন্তান হয়ে যেত, তাহলে তাদের জীবন সফল হয়ে যেত। নীরু আর নীমা কে যদিও মুসলমান বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল তবুও তাদের শ্রদ্ধা ভগবান শঙ্কর জীর প্রতি ছিল, যাকে তারা এত বছর ধরে পূজা করে আসছিলেন। নীরু, নীমা-কে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন, “নীমা, আমাদের ভাগ্যে যদি কোনো সন্তান থাকতো তাহলে ভগবান শংকর অবশ্যই দিতেন। এখন আমাদের ভাগ্যে কোনো সন্তান নেই। তুমি এইভাবে কেঁদে কেঁদে নিজের চোখ খারাপ করো না। বৃদ্ধাবস্থায় আমাদের কাছে আমাদের দেখভাল করার জন্য কেউ নেই। তুমি কেঁদো না।”
এই ধরনের কথা বার্তা বলতে বলতে তারা লহরতারা সরোবরে পৌঁছায়। সবার আগে নীমা স্নান করে নেয়। তারপর, পূর্বের ভেজা কাপড় ধোয়ার জন্য পুনরায় দিঘির দিকে যায়। তখনও নীরু দীঘিতে স্নান করছিলেন, তো নীমা দীঘিতে কিছু একটা নড়াচড়া করতে দেখল। বালক রূপে দৈবীয় কার্য করা কবীর জীর মুখে একটি পায়ের আঙ্গুল ছিল, অপর পা-টি হাওয়াতে দোলাচ্ছিলেন। উনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে এটা আবার সাপ নয়তো! আমার স্বামীকে ছোবল না মেরে দেয়। যখন উনি মনোযোগ দিয়ে দেখলেন, তখন পদ্ম ফুলের উপর একটি শিশুকে দেখতে পেলেন। উনি চিৎকার করে উঠলেন,”দেখো! বাচ্চা ডুবে যাবে। বাচ্চা ডুবে যাবে।”
নীরু ভাবলেন যে নীমা পাগল হয়ে গেছে, এখন তো জলের মধ্যে ও বাচ্চা দেখা শুরু করে দিয়েছে। নীরু বললেন,”নীমা, আমি তোমাকে বলছি তুমি বাচ্চার বিষয়ে বেশি চিন্তা করো না। এখন তুমি জলের মধ্যেও বাচ্চা দেখতে শুরু করেছো” নীমা বললেন, “হ্যাঁ সত্যি। ওখানে দেখো। বাচ্চা ডুবে যাবে।” নীমার কথাতে জোর দেখে, নীরু দেখল নীমা কোন দিকে ইশারা করছে। নীরু ওখানে সত্যি সত্যিই এক বালক কে দেখতে পেলেন। নীরু শিশু রূপে থাকা ভগবান কবীর জী কে পদ্মফুল সহিত তুলে নীমা কে দিয়ে দিলেন। নীরু আবার স্নান করার জন্য জলের মধ্যে চলে গেলেন।
নীরু ভাবলেন (কেননা মানুষ সমাজের বিষয়ে অধিক চিন্তিত থাকে),“যদি আমরা এই শিশুকে ঘরে নিয়ে যাই, তাহলে লোকেরা জিজ্ঞাসা করবে যে আমরা কোথা থেকে এই বাচ্চা এনেছি। যদি আমরা বলি যে আমরা ওকে পদ্ম ফুলের উপরে পেয়েছি, তাহলে আমাদেরকে কেউ বিশ্বাস করবে না। তারা বলবে যে আমরা কারোর বাচ্চা চুরি করে এনেছি, এখন তার মা হয়তো কাঁদছে। তারা রাজার কাছে অভিযোগ করবে এবং আমাদেরকে শাস্তি দেবে। আমাদের প্রতি হিন্দুদের কোন সমর্থন নেই আর আমরা এখনো পর্যন্ত মুসলমানদের সাথে কোন সম্বন্ধ বানাইনি।” নীরু স্নান করার পর বাইরে আসলেন। উনি দেখলেন নীমা, এক মায়ের মত শিশু রূপে থাকা ভগবান কবীর জী-কে চুম্বন করছিলেন, কখনো কখনো গলায় জড়িয়ে ধরছিলেন, সে নিজের শিব ভগবান কে লক্ষ লক্ষ ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন কারণ তিনি ওনার মনোকামনা পূর্ণ করেছেন।
কবীর পরমেশ্বর, যার নামের জপ করলে আমাদের আত্মায় এক বিশেষ শিহরণ হয়। যাকে পাওয়ার জন্য ঋষি-মুনি এবং মহর্ষিরা হাজারো বছর ধরে তপস্যা করে নিজেদের শরীর ক্ষয় করে দিয়েছে। ওই ভগবান কে বালক রূপে নীমা কোলে নিয়ে রেখেছিলেন। উনি কেমন খুশি অনুভব করছিলেন তার বর্ণনা করা সম্ভব নয়।
নীরু নীমাকে বললেন,“নীমা তুমি এই বাচ্চাকে এখানেই রেখে দাও। এটাই আমাদের জন্য ভালো হবে।” নীমা নীরুকে বললেন,‘জানিনা এই বাচ্চা আমার উপর কি জাদু করেছে। আমি ওকে ছাড়তে পারবো না; আমি মরতেও পারি।” নীরু নীমাকে নিজের চিন্তার কথা বললেন, যে তাদেরকে গ্রাম থেকে বার করে দেবে, সাথে বাচ্চাও কেড়ে নেবে। নীমা বললেন, “আমি এই বাচ্চার জন্য বনবাস স্বীকার করতেও রাজি আছি।”
নীরু বললেন, “নিমা তুই খুব জেদি হয়ে গেছিস। তুই আমার কথাও মানছিস না। আমি সব সময় তোর সাথে ভালোবেসে ব্যবহার করেছি কারণ আমাদের কোনো সন্তান নেই। আমি তোকে কখনো বকাবকি করিনি, যাতে তোর আত্মা দুঃখী না হয়ে যায়। এই ভেবে আমি সর্বদা তোর সকল ইচ্ছা পূর্ণ করার চেষ্টা করেছি। এইজন্যে তুই এখন জেদি হয়ে গেছিস আর আমার কথা মানছিস না।”
সেই দিন নীরু নিজের জীবনে প্রথমবার নীমাকে থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুলেছিল। ওনার দুচোখ অশ্রু-তে ভোরে গিয়েছিল। উনি অভিমানে বললেন,“তুমি আমার কথা মানছো না। এই বাচ্ছাকে এখানেই রেখে দাও। নাহলে এখন আমি, তোমাকে থাপ্পড় মারবো।”
সেই সময় পরমাত্মা কবীর জী শিশু রূপে বললেন,“নীরু, আমাকে ঘরে নিয়ে চলো। কেউ কিছু বলবে না। আমি এখানে তোমাদের জন্যই এসেছি।” এক দিনের শিশুকে কথা বলতে দেখে নীরু ভয় পেয়ে গেল। আর কিছু না বলে, আগে আগে এগিয়ে চললো। বাচ্চার প্রতি মোহের কারণে নীমা কবীর সাহেব জীর কথা শুনতে পায়নি।
গ্রামে পৌঁছানোর পরে লোকেরা জিজ্ঞাসা করল তারা এই বাচ্চা কোথায় পেয়েছে? নীরু বললেন,তারা বাচ্চা-টি কে পদ্ম ফুলের উপর পেয়েছেন। লোকেরা এটি শুনলেন। কেউ কেউ বিশ্বাস করলেন; কেউ কেউ করলেন না। কিন্তু তারা এই বিষয়ে বিশেষ ধ্যান দিলেন না। গ্রামের লোকেরা ওই অত্যন্ত সুন্দর শিশুকে দেখতে আসলেন।
শিশু রূপে ভগবান কবীর জীর সুন্দরতা দেখে পুরো শহর অবাক হয়ে যায়। রাজাও ওই সুন্দর শিশুকে দেখতে আসলেন। স্বর্গের দেবতারাও বালক রূপ ধারী কবীর জীর সুন্দরতা দেখছিলেন। প্রত্যেকেই নিজের নিজের অনুমান ব্যক্ত করছিল যে এ কোনো দেবতা, ভুত অথবা কিন্নরের আত্মা হতে পারে, যার ফলে নিমা দুঃখী হয়ে যাচ্ছিলেন, আর বলছিলেন “তোমরা আমার ছেলের উপর কু-দৃষ্টি ফেলছো।”
লোকেরা বলছিল যে এই বাচ্চা কোন দেবতা মনে হচ্ছে। স্বর্গের দেবতারা বলছিলেন যে এই বাচ্চা ব্রহ্মা, বিষ্ণু অথবা শিবের অবতার বলে মনে হচ্ছে। ওপরে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব বলছিলেন যে এই বাচ্চা পার ব্রহ্মের (পরমেশ্বরের) অবতার হতে পারে।
ভগবান কবীর জী-র ভরণ-পোষণ এক কুমারী গাইয়ের দুধের দ্বারা হয়।
ভগবান কবীর জী বালকের লীলাময় শরীর রূপে 25 দিনের হয়ে গিয়েছিল। উনি কিছুই খাওয়া-দাওয়া করেননি। তারপরেও ওনার শরীর এমনভাবে বাড়ছিল যেন বাচ্চা প্রতিদিন দুবার এক কিলো করে দুধ পান করে। নীমার চিন্তা হল যে এই বাচ্চা যেন মারা না যায়। উনি ভাবলেন, যদি এই বাচ্চা মারা যায়, তো “ আমিও সাথে সাথে মরবো।” উনি নিজের ভগবান শংকর জী কে শরণ করে, খুব কাঁদছিলেন, “হে ভগবান শঙ্কর জী, এমন হলে আপনি আমাদের এই বাচ্চা নাও দিতে পারতেন। এখন আপনি বাচ্চা দিয়ে আবার নিয়ে নিতে চাইছেন।” ভগবান কবীর জী ভাবলেন,“আমি তো মরবো না। কিন্তু এই বুড়ি মহিলা এই মানসিক চাপে অবশ্যই মরে যাবে”।
ভগবান কবীর জী, ভগবান শিব জী কে প্রেরিত করলেন। ভগবান শিব জী দেখলেন কে ওনাকে স্মরণ করছেন। এরপর ভগবান শংকর সাধু রূপে ওখানে আসলেন। উনি নীমা কে জিজ্ঞাসা করলেন সে কেন কাঁদছে।” নীমা ওনাকে বললেন, যে আমার বাচ্চা কিছুই খাচ্ছে না। “ও মরে যাবে, আর আমিও ওর সাথে মরবো।” ভগবান শিব নীমাকে জিজ্ঞাসা করল তার পুত্র কোথায়? নীমা ভগবান কবীর জীকে শিব জীর চরণে রাখতে যাচ্ছিলেন, তৎক্ষণাৎ উনি হাওয়াতে ভেসে উঠে ভগবান শিবের কপাল বরাবর স্তরে পৌঁছে যায়।
নীমা ভাবলেন এটি এই সাধু জীর কেরামতি। ভগবান শিব এবং ভগবান কবীর জী 7 বার কথোপকথন করলেন। ভগবান কবীর জী শিব জী কে বললেন, “নীরু-নীমা কে একটি কুমারী গাই নিয়ে আসার জন্য বলো। আপনি তার পিঠে হাত দিয়ে থপথপিয়ে দেবেন। সে দুধ দেবে।”
ভগবান শঙ্কর নীমা কে বললেন, “তোমাদের বাচ্চা মরবে না, মা..। ওর আয়ু অনেক লম্বা। ওর মহিমার কোনো অন্ত নেই। ধন্য তুমি। ধন্য এই নগরী যেখানে এতো মহান আত্মা এসেছে।”
নিমা ভাবলেন যে সাধু জী কেবল ওনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তখন ভগবান শিব বললেন, “আপনি একটি কুমারী গাই এবং একটি নতুন পাত্র নিয়ে আসুন। “নীরু তেমনটাই করলেন। নতুন পাত্রটিকে স্তনের নিচে রেখে দেওয়া হল। ভগবান শিব গাই-এর পিঠে থপথপিয়ে দিলেন। স্তন দিয়ে দুধের ধারা বইতে লাগলো। পাত্রটি সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হবার পর দুধ বন্ধ হয়ে গেল। ওই দুধ কবীর পরমেশ্বর জী পান করলেন।
নিমা সাধু জী কে ধন্যবাদ দিলেন। উনি ভাবলেন সন্ত জী এই সমস্ত কিছুই করছেন। নীমা দক্ষিণা (দান) দেওয়ার জন্য নিজের ভাব ব্যক্ত করলেন। ভগবান শিব বললেন,“আমি সেই সমস্ত লোকদের মত নই, যারা পয়সা চায়। আমি এখানে এজন্য জন্যে এসেছি কারণ আমি তোমাকে দুঃখী দেখছি।”
এই বলে ভগবান শিব চলে গেলেন। তারপর থেকে ওই গাই প্রতিদিন দুধ দিতে লাগলো। ওই দুধ কবীর পরমেশ্বর পান করতেন। এইভাবে পরমেশ্বর কবীর জীর পালন পোষনের দিব্য কার্য সম্পন্ন হয়।
পবিত্র ঋগ্বেদ মন্ডল ৯ সুক্ত ১ মন্ত্র ৯ -তে বলা হয়েছে যে ঈশ্বরের পালন-পোষণের দিব্য কার্য একটি কুমারী গাই-এর দুধের দ্বারা হয়। পরমাত্মার এই চিহ্নিতকরনে কেবলমাত্র পরমাত্মা কবীর জীই সিদ্ধ হয়েছে।
পাঁচ বছর বয়সে কবীর জী নিজের লীলাময় শরীর ( শরীরের সাথে ঐশ্বরিক কার্য সম্পাদন করতে শুরু করে) দিয়ে সেখানকার নাম জাদা বড়ো বড়ো সন্তদের সাথে তিনি আধ্যাত্মিক আলোচনা করা শুরু করে দিয়েছিলেন। কোনো সন্ত বা ঋষি তার আধ্যাত্মিক জ্ঞানের উত্তর কখনো দিতে পারেনি।
ভগবান কবীর জী গুরু বানিয়েছিলেন
ভগবান কবীর জী গুরু ধারণ করার জন্য একটি লীলা করেছিলেন আর আড়াই (2.5) বছরের বালকের রূপ বানিয়ে ব্রম্ভ মুহূর্তের সময়ে গঙ্গার ঘাটের সিঁড়িতে শুয়ে পড়েছিলেন। স্বামী রামানন্দ জী ব্রহ্ম মুহুর্তে স্নান করার জন্য গঙ্গার ঘাটে যেতেন। সেদিন স্বামী রামানন্দ জীর পায়ের খড়ম সিঁড়িতে শুয়ে থাকা কবীর সাহেবের মাথায় লেগে যায়। ভগবান কবীর সাহেব জী অভিনয় করার জন্য বাচ্চাদের মত কাঁদতে শুরু করে। স্বামী রামানন্দ জী হঠাৎ নিচু হলেন। নিচু হওয়াতে ওনার এক মনের তুলসীর মালা (যা এক বৈষ্ণব সাধুর চিহ্ন ছিল) ভগবান কবীর জীর গলায় পড়ে যায়। স্বামী রামানন্দ জী, শিশু রূপে থাকা কবীর পরমেশ্বরের মাথায় হাত রাখলেন আর বললেন, “বেটা, ‘রাম’ ‘রাম’ বলো। রামের নামে দুঃখ নাশ হয়। ভগবান কবীর জী কান্না বন্ধ করে দেয়। স্বামী রামানন্দ জী বালক রূপী কবীর জী কে, পুনরায় সিঁড়িতে বসিয়ে স্নান করতে চলে যায়, এই ভেবে যে বাচ্চা ভুল করে এখানে চলে এসেছে, আমি ওকে নিজের আশ্রম এ নিয়ে যাব। যার বালক হবে, সে আশ্রম থেকে নিয়ে যাবে।” ভগবান কবীর জী ওখান থেকে অন্তর্ধান হয়ে গেলেন আর নিজের কুঠিরে পৌঁছে গেলেন।
সেই সময় ভগবান কবীর জী একবার স্বামী রামানন্দের শিষ্য বিবেকানন্দ জী কে, সেই সমস্ত শ্রোতাদের সামনে প্রশ্ন করেছিলেন যাদেরকে তিনি বিষ্ণুপুরাণ শোনাছিলেন, যে পরমাত্মা কে ? বিবেকানন্দ জীর কাছে কোনো উত্তর ছিল না। অতএব শ্রোতাদের সামনে নিজের মান বাঁচানোর জন্য উনি বালক রূপ ধারী কবীর পরমেশ্বর জী কে বকাবকি করতে শুরু করে দেয়, যে তার জাতি এবং তার গুরু কে? ওখানে উপস্থিত শ্রোতারা বলেন যে কবীর জী নিচু জাতির তাঁতি (জুলাহা/নানক)। ভগবান কবীর জী বললেন, “আমার গুরু সে আপনারও গুরু। আমি স্বামী রামানন্দ জীর কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছি।” বিবেকানন্দ জী হাসলেন, “দেখুন সবাই! এই বালক কেমন মিথ্যা কথা বলছে। স্বামী রামানন্দ জী নিচু জাতির লোকেদের দীক্ষা দেয় না। আমি স্বামী রামানন্দ জী কে বলব আর তারপর তোমরা সবাই কালকে এসে দেখবে যে স্বামী রামানন্দ জী, এই বালক কে কিভাবে শাস্তি দেয়।
বিবেকানন্দ জী স্বামী রামানন্দ জী কে সমস্ত কথা বললেন। স্বামী রামানন্দ জীও ক্রোধিত হয়ে বালককে ধরে আনতে বললেন। পরের দিন সকালে ভগবান কবীর জী কে স্বামী রামানন্দ জীর সামনে ধরে আনা হলো। স্বামী রামানন্দ জী নিজের ঝুপড়ির সামনে এটা দেখানোর জন্য একটি পর্দা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন, যে উনি দীক্ষা দেওয়া তো দূরের কথা ওনার কাছে নিচুজাতের লোকেদের দর্শনও হয় না। স্বামী রামানন্দ জী অত্যন্ত ক্রোধের সাথে পর্দার পিছন থেকে কবীর পরমেশ্বর জী কে জিজ্ঞাসা করলেন যে সে কে? ভগবান কবীর জী বললেন, “হে স্বামী জী, আমি এই সৃষ্টির নির্মাতা। এই সমস্ত সংসার আমার উপরই আশ্রিত। আমি উপরে সনাতন পরমধাম সতলোকে নিবাস করি।”
স্বামী রামানন্দ জী এটা শুনে দুঃখী হয়ে গেলেন। তিনি কবীর জী কে ধমক দিয়ে আরো কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন! যার উত্তর একজন আদর্শ শিষ্যের মতো আচরণ করে, ভগবান কবীর জী শান্ত ও বিনম্রভাবে দিয়েছিলেন। তখন রামানন্দ জী ভাবলেন, যে এই বালকের সাথে চর্চা করতে অনেক সময় লাগবে, তাই তিনি প্রথমে নিজের দৈনন্দিন ধার্মিক সাধনা সম্পূর্ণ করতে মনস্থির করলেন।
স্বামী রামানন্দ জী ধ্যান অবস্থাতে বসে কল্পনা করতেন যে তিনি স্বয়ং গঙ্গা থেকে জল এনেছেন, সেই জলে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিকে স্নান করিয়েছেন, বস্ত্র বদল করেছেন, মালা পরিয়েছেন এবং পরিশেষে মূর্তির মস্তকে মুকুট যথাযথ রেখেছেন।
ঐদিন স্বামী রামানন্দ মূর্তির গলায় মালা পরাতে ভুলে গেছেন। উনি মালা টি কে মুকুটের উপর দিয়ে পরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু মালাটি মুকুটে আটকে যায়। স্বামী রামানন্দ জী ব্যথিত হয়ে উঠলেন, আর নিজেই নিজেকে বলতে লাগলেন, “আমি আমার পুরো জীবনে আজ পর্যন্ত কখনো এমন ভুল করিনি। আমি আজ এমন কি ভুল করেছি যে এমন হয়ে গেল?” তখন-ই কবীর পরমেশ্বর জী বললেন,“স্বামী জী! মালার গাঁট খুলুন। আপনাকে মুকুট খুলতে হবে না।”
রামানন্দ জী ভাবলেন, “আমি তো কেবলমাত্র কল্পনা করছিলাম। এখানে কোনো মূর্তিও নেই। মাঝখানে একটি পর্দা ও আছে। আর এই বালক জানতো, যে আমি মানসিক রূপে কি করছি।” উনি আর গাঁট কি খুলবেন। এমনকি উনি পুরো পর্দাটাই খুলে ফেলে দিলেন আর তাঁতী জাতির বালক রূপি কবীর পরমাত্মাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, রামানন্দ বুঝতে পারলেন যে ইনি ঈশ্বর।
তারপর ৫ বছরের বাচ্চা রূপে ভগবান কবীর জী ১০৪ বছরের মহাত্মা স্বামী রামানন্দ জী কে জ্ঞান বোঝালেন। উনি ওনাকে সৎলোক দেখান, বাস্তবিক আধ্যাত্মিক জ্ঞান বলে রামানন্দ জীকে দীক্ষা দেন। কবীর পরমেশ্বর জী রামানন্দ জী -কে সাংসারিক দৃষ্টি-কোন দিয়ে নিজের গুরু হয়ে থাকতে বললেন অন্যথায় আগামী প্রজন্ম বলবে যে, গুরু ধারন করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই, কেননা কবীর জীর কোনো গুরু ছিল না। স্বামী রামানন্দ জী কবীর জী -কে অনুরোধ করলেন যে উনি এমনটা করতে পারবেন না, কেননা উনি জানতেন যে ঈশ্বরের গুরু হওয়া পাপ। ভগবান কবীর জী বললেন, *“আপনি এটা আমার আদেশ মনে করে পালন করুন।”*
পরমেশ্বর কবীর জী-র অন্য চমৎকার
হিন্দু ও মুসলিম ধর্ম গুরুদের অভিযোগের কারণে সিকন্দর লোধী একটি গর্ভবতী গাভী-কে মাঝামাঝি দু-টুকরো করে কেটে দিয়েছিলেন। আর ভগবান কবীর জী -কে বলেছিলেন যে, যদি তুমি আল্লাহ হও তো জীবিত করে দেখাও। নইলে আমি তোমার মাথা কেটে দেব। ভগবান কবীর জী গাভী ও বাছুরের পিঠে থাপ্পড় মারলেন। দুজনেই জীবিত হয়ে উঠল। ভগবান কবীর জী ওই গাভী-র দুধে বালতি ভরিয়ে দিল। সিকন্দর লোধী কবীর জী কে দণ্ডবৎ প্রণাম করলেন।
সিকন্দর লোধী-র জ্বলনের রোগ ঠিক করে দিয়েছিলেন
মহারাজা সিকন্দর লোধী একটি অসাধ্য রোগে পিড়িত ছিল। (তার জ্বলনের রোগ ছিল) উনি অনেক বৈদ্যের কাছে চিকিৎসা করিয়ে ছিলেন। অনেক ধার্মিক অনুষ্ঠানও করেছিলেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।তখন কেউ তাকে কবীর পরমেশ্বর জী-র বিষয়ে বললেন। উনি কবীর পরমেশ্বর জী-র কাছে গেলেন। ভগবান কবীর জী কেবলমাত্র নিজের আশীর্বাদের দ্বারা-ই ওকে ঠিক করে দিয়েছিলেন।
স্বামী রামানন্দ জী -কে জীবিত করেছিলেন
সিকন্দর লোধী স্বামী রামানন্দ জী কে ক্রোধিত হয়ে হত্যা করে দিয়েছিলেন। ভগবান কবীর জী স্বামী রামানন্দ জী-কে সকলের সামনে পুনরায় জীবিত করে দিয়েছিলেন। এটা দেখে সিকন্দর লোধী কবীর পরমেশ্বর জী-র শরণ নিলেন।
কমাল-কমালী – কে জীবিত করেছিলেন
অন্যদিকে সিকন্দর লোধী-র মুসলমান পীর শেখ তকীর কবীর পরমেশ্বরের প্রতি ঈর্শা হতে লাগলো। তিনি সিকন্দর লোধী কে বললেন, “আমি ওনাকে তখনই আল্লাহ স্বীকার করব, যখন উনি আমার সামনে একটা মৃত মানুষকে জীবিত করবে। “সিকন্দর, পরমাত্মা কবীর জী-র কাছে নিজের পরেশানীর (সমস্যার) কথা বললেন।পরের দিন সকালে তিনি দেখলেন, যে একটা 12 -13 বছরের বালক -এর মৃতদেহ নদীতে ভাসছে। বালকটিকে বাঁচানোর জন্য কবীর জী, শেখতকীকে প্রথমে চেষ্টা করতে বললেন। শেখতকী চেষ্টা করলেন কিন্তু অসফল হলেন। তখন ভগবান কবীর জী বালক কে জীবিত করলেন। ওখানে উপস্থিত সমস্ত লোক বললেন,”কামাল (চমৎকার) করে দিয়েছেন! কামাল করে দিয়েছেন!” বালকের নাম কমাল রাখা হলো। ভগবান কবীর জী, তাকে নিজের পুত্র রূপে নিজের নিকটে রাখলেন।
কিন্তু শেখতকী এটা দেখেও কবীর জী-র শক্তিকে স্বীকার করলেন না এবং পুনরায় বললেন,”আমি ওনাকে আল্লাহ তখন স্বীকার করব, যখন তিনি আমার মৃত মেয়েকে পুনর্জীবিত করবেন, যে কবরের মধ্যে দফন হয়ে আছে। ওই বালক সম্ভবত মৃত ছিল না।” তারিখ নির্ধারণ করা হল। নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত তারিখে চমৎকার দেখার জন্য অনেক লোক পৌঁছে গেল। ভগবান কবীর জী ওই মেয়েটিকে জীবিত করে দিলেন। সবাই বলল,” কামাল করে দিয়েছেন! কামাল করে দিয়েছেন!” মেয়েটির নাম কমালী রাখা হল। সে শেখতকীর সঙ্গে যেতে অস্বীকার করে বলল,”এখন আমি নিজের আসল পিতার সাথে থাকবো।” সে দেড় ঘণ্টা ধরে সতসঙ্গ করল আর উপস্থিত লোকেদের-কে বলল যে ইনিই *অল্লাহু আকবর*। সে নিজের পিতাকে বলল,” শেখ তকী, তুমি নিজের কর্ম -কে খারাপ করো না। ওনাকে চেনার চেষ্টা করো। উনি সর্বোচ্চ ভগবান।” হাজার হাজার লোক কবীর পরমেশ্বর -এর শরণ নিলেন। এই প্রকার কবীর পরমেশ্বর জী-র এক পুত্র আর এক পুত্রী হল। ভগবান কবীর জী বিবাহ করেন নি।
সেউ -কে জীবিত করেছিলেন
ভগবান কবীর জী একবার কমাল আর শেখ ফরিদ (ওনার এক শিষ্য ) -এর সাথে দিল্লিতে নিজের শিষ্য সম্মন (পিতা), সেউ (পুত্র) এবং নেকি (মা) -এর নিকট গিয়েছিলেন। পরিবার-টি অত্যন্ত গরীব ছিল। ঐদিন ওনাদের কাছে খাবার ছিল না। ওনারা (সম্মন আর সেউ ) রাতে নিকট একটি দোকান থেকে এক সের আটা চুরি করার যোজনা তৈরি করলেন (1সের =1 কিলো প্রায়)। সেউ ভিতরে গিয়ে নিজের পিতা সম্মনকে আটা দিল। এর-ই মধ্যে দোকানের মালিকের ঘুম ভেঙে গেল। তিনি সেউ -এর পা ধরে নিয়েছে। সম্মন নিজের পত্নী নেকি-কে আটা দিলেন। নেকি তাকে বললেন, যে সেউ এর মাথা কেটে দাও, নইলে দোকান মালিক গুরুদেব -কে সাজা করিয়ে দিবে। সম্মন তাই করল। সকালে যখন তিনি পরমেশ্বর কবীর জী তথা অন্য অতিথিদের জন্য ভোজন তৈরি করিয়েছেন, তখন ভগবান কবীর জী সেউ -কে ডাকলেন। সেউ আসল আর ভোজন খাওয়ার জন্য লাইনে বসে পড়ল। সম্মান আর নেকি এটা দেখে অবাক হয়ে গেল, যে সেউ -এর গলায় কাটার কোনো চিহ্ন-ই নেই। এরপরে ওই মহল্লাতে সম্মন অত্যন্ত ধনী হয়ে গেল।
লক্ষ লক্ষ লোকের অসাধ্য রোগ ঠিক করেছেন
কাশী-তে নিজের একশো কুড়ি বছরের লম্বা প্রবাসের মধ্যে,ভগবান কবীর জী লক্ষ লক্ষ লোকের অসাধ্য রোগ -এর সাথে সাথে অন্যান্য সমস্যাও ঠিক করে দিয়েছেন। তিনি নিজের প্রিয় আত্মাগনকে নিজের আধ্যাত্বিক উপদেশ দেওয়ার জন্য কাশী ছাড়া একদিনে হাজার স্থানে প্রকট হয়ে যেতেন। কারন তখন দূরসঞ্চার এর কোন সাধন ছিল না।
ওই সময় ভারতের মোট জনসংখ্যা প্রায় চার কোটি ছিল। ভারতে পাকিস্তান,-আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান, ইরাক এবং ইরানও শামিল ছিল। অস্পৃশ্যতাও চরমে ছিল। ওই সময়, এক ধানক /জুলাহা /তাঁতির সম্পূর্ণ ভারতে 64 লাখ শিষ্য ছিল। এর থেকে বুঝতে পারা যায় যে তিনি একজন সামান্য বা সাধারণ সন্ত ছিলেন না। তিনি স্বয়ং ভগবান ছিলেন আর আমরা ওনাকে চিনতে পারিনি।
ভগবান কবীর জী আধ্যাত্মিক জ্ঞান বোঝাতেন
ভগবান কবীর জী *আমাদের পবিত্র গ্রন্থের* আধারে আধ্যাত্মিক জ্ঞান বলতেন, কবীর জী বলতেন “হিন্দু আর মুসলমান উভয়ে পূজার সঠিক পদ্ধতি অভ্যাস করছে না। গীতা, দেবতাদের পূজার পক্ষে নয়, না তো হজরত মহম্মদ, কখনো মাংস খেয়েছেন। এই অজ্ঞানী ধর্মগুরুরা আপনাদেরকে ভ্রমিত করছে।” কিন্তু ওই সময় আমরা নিরক্ষর ছিলাম।
ওই সময় কেবল ব্রাহ্মণদের-ই শিক্ষা অর্জনের অনুমতি ছিল। নকল ধর্মগুরুরা জনতাকে এই বলে বিভ্রান্ত করতো,যে কবীর জী নিরক্ষর। ওনার পবিত্র পুস্তকের কোনো জ্ঞান থাকতে পারে না, কারণ উনি পড়েন নি। উনি মিথ্যাবাদী। এই সমস্ত ভন্ডদের প্ররোচনায় এসে আমরা কবীর পরমেশ্বর জী-র শত্রু হয়ে যাই। ওই সময় নকলী ধর্ম গুরুদের কারণে লোকদের মধ্যে কবীর পরমেশ্বর এর নামের প্রতি ঘৃণা উৎপন্ন হয়ে গিয়েছিল।
পরমেশ্বর দ্বারা বলা আধ্যাত্মিক জ্ঞান না বুঝে লোকেরা তাঁর উপর পাথর ছুড়তে শুরু করে দিয়েছিল, হিন্দু ধর্মীয় নেতারা এই বলে হিন্দুদেরকে বিভ্রান্ত করত যে,”কবীর আমাদের ধর্মের আলোচনা করে। ওরা আমাদের তিনমূর্তির আলোচনা করে। ও আমাদের ত্রিমূর্তি কে আলোচনা করে।
“মুসলিম ধার্মিক নেতারা বলেন, ” কবীর আমাদের ধর্মের আলোচনা করে। ও নিজেকে আল্লাহ বলে।” তারা এবং বিভ্রান্ত জনতা কবীর সাহেব জী কে সব রকমভাবে কষ্ট দিতে থাকে।
শেখ তকী কবীর পরমেশ্বরকে 52 বার মারার চেষ্টা করেন।
শেখতকী ঐ সময় ভারতের সকল মুসলমান দের নেতা (মুখিয়া) ছিলেন। তিনি পরমেশ্বর কবীর জী কে 52 বার মারার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি কবীর জী কে একটি খালি কুয়ো তে ফেলে দিয়েছিলেন। তার উপরে কুয়োর মধ্যে মাটি, ডাল, গোবর, লতা-পাতা দিয়ে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। তারপর শেখতকী সিকন্দার লোধী কে খবর দিতে যান যে,কবীর মারা গেছে। কিন্তু তিনি দেখলেন, যে কবীর জী সিকন্দর লোধীর পাশে বসে আছেন। শয়তান শেখতখী সেখানেও থামলেন না।
তিনি পরমেশ্বর কবীর জীকে কড়াই ভর্তি ফুটন্ত তেলের উপর বসতে বললেন। ভগবান কবীর জী ফুটন্ত তেলের উপর আরামে বসে থাকলেন। ওনার কিছুই হলো না। একবার রাত্রির সময় শেখতকী কিছু গুন্ডাদের নিয়ে কবীর পরমেশ্বরের কুঠিরে গেলেন। তারা ধারালো তলোয়ার দ্বারা কবীর জীর উপর 6-7 বার আঘাত করল। প্রত্যেকবার তলোয়ার কবীর জীর শরীরের এপার-ওপার হয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন তলোয়ার তুলোর মতো কিছু নরম জিনিস কে ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। উনার শরীরে কোন হাড় ছিল না। ওনাকে মৃত ভেবে গুন্ডারা পিছিয়ে গেল। কবীর পরমেশ্বর জী উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,”শেখতকী! এভাবে যেও না। একটু জল খেয়ে যাও।” সকলে ওনাকে ভূত ভেবে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল। গুন্ডাদের জ্বর এসে গিয়েছিল। তবুও ভগবান কবীর জী তাদের সুস্থ করেছিলেন।
কবীর জী-কে একটি রক্ত পিপাসু হাতির সামনে দাঁড় করানো হলো, যে নেশায় মত্ত হয়েছিল। ভগবান কবীর জী তাকে একটি বিশাল সিংহের রূপ দেখালেন। সিংহ কে দেখে হাতি থতমত খেয়ে ভয়ে পালিয়ে গেল।
কবীর পরমেশ্বরের গলায় একটি বড় ভারী পাথর বেঁধে তাকে গঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। বাঁধন ছিঁড়ে গেল, পাথর ডুবে গেল, ভগবান কবীর জী নদীর উপরে বসেছিলেন। নদীর জল কবীর সাহেবের চরণ স্পর্শ করছিল। তারপর তার উপরে পাথরের বর্ষণ করা হল। 12 ঘণ্টা পর্যন্ত তোপ চালানো হল। কিন্তু অবিনাশী-কে কেউ কি মারতে পারে? এতবার মারার চেষ্টা করেও পরমেশ্বর কবীর জীর মৃত্যু হল না। উনি বাস্তবিক শাশ্বত ঈশ্বর।
কলিযুগের 5505 বর্ষ 1997 -সালে পূর্ণ হয়েছে
ভগবান কবীর জী নিজের সত্যিকারের আধ্যাত্মিক জ্ঞান আর পূজার পদ্ধতি-কে নিজের প্রিয় আত্মাদের কাছে পৌছানোর জন্য অনেক কঠিন সংঘর্ষ করেছেন। উনি জানতেন যে, আজ সমাজ অশিক্ষিত হওয়ার কারণে তাকে কেউ চিনতে পারছে না। এজন্য কবীর পরমেশ্বর জী মোটামুটি 600 বছর আগে ধর্মদাস জী-কে বলেছিলেন, কলিযুগের 5505 বর্ষ ( 1997 খ্রী: ) পূর্ণ হওয়ার পর সমাজ শিক্ষিত হবে। আমি আবার আসব, আর ওই সময় সারা সংসার আমার আশ্রয় নেবে। তখন পুরো দুনিয়া স্বাধীন হয়ে যাবে। যতক্ষন না সেই সময় আসছে, ততদিন আমার শব্দ নিরাধার মনে হবে।”
পরমেশ্বর কবীর জী মগহর শহরে শরীর ত্যাগ করেছিলেন
যখন নিজের সনাতন স্থানে ফিরে যাওয়ার সময় এল, তখন কবীর পরমেশ্বর জী, এই নশ্বর সংসার ত্যাগ করার জন্য মগহর কে নির্বাচন করলেন। কেননা ওই সময়ের ধর্মগুরুদের দ্বারা এক বিশেষ উড়ো খবর ছড়িয়ে ছিল, যে “মগহর-এ মারা গেলে সে গাধা হয়, আর যে কাশিতে মারা যায় সে স্বর্গে যায়।” একশো কুড়ি (120) বছর বয়সে উনি কাশি থেকে তিন দিন পায়ে হেঁটে মগহর পৌঁছালেন। এটা দেখানোর জন্য যে একজন সত্যিকারের উপাসকের বৃদ্ধ হয়ে গেলেও কষ্ট হয় না।
ওনার শিষ্য কাশী-র রাজা বীরদেব সিংহ বঘেল, হাজার সশস্ত্র সৈনিক আর দর্শকদের নিয়ে কবীর জীর পিছনে পিছনে গেলেন। মগহরের রাজা বিজলী খাঁ পাঠান, যিনি কবীর পরমেশ্বর জীর শিষ্য ছিলেন। তিনিও যথা সম্ভব ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রস্থান করার পূর্বে ভগবান কবীর জী সেখানকার শুকিয়ে যাওয়া আমী নদীতে জল প্রবাহিত করেছিলেন।
কবীর জী দেখলেন যে হিন্দু রাজা বীরদেব সিংহ বঘেল আর মুসলিম রাজা বিজলী খাঁন পাঠান দুজনে নিজের নিজের সেনা তৈরি করে রেখেছে। কবীর জী তাদের জিজ্ঞাসা করলেন যে তারা নিজেদের সঙ্গে সেনা কেন এনেছে? বীরদেব সিংহ বঘের আর বিজলী খাঁন পাঠান দুজনেই নিজেদের মাথা নত করলেন। অন্য হিন্দু ও মুসলিম সৈনিকরা তাদের ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন। আর বললেন, আপনি আমাদের গুরু। আমরা আপনার অন্তিম সংস্কার নিজেদের ধর্ম অনুসারে করবো। যদি এরা না মানে তো আমাদের মধ্যে যুদ্ধ হবে। ভগবান কবীর জী বললেন, আমি তোমাদের একশো কুড়ি বছর ধরে এই শিখিয়েছি? তোমরা হিন্দু আর মুসলমান এখনো নিজেদেরকে আলাদা মনে কর!
ভগবান কবীর জী কিছু সময়ের জন্য সেখানে উপস্থিত সকলকে আধ্যাত্বিক উপদেশ দিলেন। ভগবান কবীর জী জানতেন যে, তারা নিজেদের মনোভাব বদলাইনি। যদিও তারা উপর উপর হ্যাঁ বলছে, কিন্তু তারা নিজের মন থেকে মানেনি।
তারপর, প্রস্থান করার জন্য কবীর জী একটি চাদরের উপরে শুয়ে পড়লেন আর তার উপর আরেকটি চাদর দিয়ে ঢেকে নিলেন। ভক্তরা শ্রদ্ধার সঙ্গে চাদরের উপরে ফুল সাজালেন। কিছু সময় পরে কবীর পরমেশ্বর জী উপর থেকে বললেন, চাদর ওঠাও। তোমরা আমার শরীর পাবে না। ওখানে যা কিছু পাবে তা দুই ভাগে ভাগ করে নাও। কিন্তু নিজেদের মধ্যে লড়াই করো না।
তারা সকলেই উপরের দিকে তাকাল, তখন দেখতে পেল একটি চমকদার রশ্মি উপরের দিকে যাচ্ছে। যখন তারা চাদর সরালো, তো দেখতে পেল যে, কবীর পরমেশ্বর জীর শরীরের আকারে ফুল আছে। তারা সকলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। আর বলতে লাগলো যে, আমরা আমাদের ঈশ্বরকে শেষ সময়েও সুখ দিইনি। উনি বাস্তবে ভগবান ছিলেন। আমরা তাকে চিনতে পারেনি। যে হিন্দু-মুসলমানরা একটু আগে নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের জন্য তৈরি ছিল,এখন তারা মাতা-পিতার মৃত্যু তে দুঃখি ভাই-বোনেদের মত একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
তারা ফুলগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করে নিল। আজ ওই স্থানেই মগহরে স্মারক আছে। এক ধারে ভগবান কবীর জীর হিন্দু মন্দির আছে। আর অন্যধারে মুসলিম মঝার আছে। মাঝে একটিমাত্র গেট আছে। ওখানে যে কেউ স্মারকের কাছে যেতে পারে। এইভাবে কবীর পরমেশ্বর জী হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে যুদ্ধ হাওয়া আটকালেন। আর তাদের ভাতৃত্ববোধের শিক্ষা দিলেন।
অন্য সম্প্রদায়ও কবীর প্রকট দিবস উদযাপন করে
কবীর সাগরের অধ্যায় কবীর বাণী 136 – 137 পৃষ্ঠায় বারো কবীর পন্থের বর্ণনা আছে। ভগবান কবীর জী ধর্মদাস জী কে বলেছিলেন যে ওই 12 -সম্প্রদায়ের মধ্যে কেবল কালেরই আদেশ হবে। তারা কবীর জীর নাম নেয় আর সতলোকের মহিমা বলে,কিন্তু তারা কাল -এর পূজা করে। যে ব্যক্তির দ্বারা এই পন্থের উৎপত্তি হবে সে পবিত্র আত্মা হবে, কিন্তু ওনাদের উত্তরসূরী কাল দ্বারা প্রেরিত হবে। অধ্যায় “কবীর চরিত্র বোধ “এর 1870 পৃষ্ঠায় 12 পন্থের নাম লেখা আছে। তারপর কবীর বাণী 137 পৃষ্ঠায় লেখা আছে, যে 12 -তম পন্থে কবীর পরমাত্মা স্বয়ং এসে অন্য সব পন্থের শেষ করবেন। তারপর 134 পৃষ্ঠায় “বংশ প্রসার” শীর্ষক এর মধ্যে কবীর পরমেশ্বর বলেছেন যে, ত্রয়োদশ বংশ জ্ঞান -এর সব অন্ধকার দূর করবে।
ওই ত্রয়োদশ পন্থের সূত্রপাত (প্রারম্ভ) সন্ত রামপাল জী করেছেন। ওনার বংশের উৎপত্তি দ্বাদশ কবীর পন্থ থেকে হয়েছে, যা সন্ত গরীব দাস জীর পন্থ সতগুরু রামপাল জী-র গুরুদেব স্বামী রামদেবানন্দ জী সন্ত রামপাল জী কে গুরুপদের দায়িত্ব অর্পণ করার সময় বলেছিলেন, “তোমার সমান দুনিয়াতে কোন সন্ত হবে না ।”
1997 সালে পরমাত্মা কবীর জী সন্ত রামপাল জী কে সাক্ষাৎ দর্শন দিয়ে সতনাম আর সারনাম এর রহস্য প্রকট করার আদেশ দিয়েছিলেন। সেই সময় এসে গিয়েছে যখন সারা সংসার ওনার শরণ নেবে।
এখানে এই বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হল এটা যে, 12 -টি আরো কবীর পন্থ আছে, যারা *কবীর সাহেব প্রকট দিবস* উদযাপন করে। সম্পূর্ন ভারতে কিছু আরো কবীর পন্থ আছে, যা কাল প্রেরণা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। তারা সবাই কবীর সাহেব প্রকট দিবস উদযাপন করে। কিন্তু, কেবল কবীর জী দ্বারা পাঠানো অধিকৃত সন্ত (কবীর বাণী অধ্যায় অনুসারে ত্রয়োদশ পন্থ)-ই প্রকট দিবসের সঠিক পদ্ধতি বলবে।
কবীর প্রকট দিবস কেমন করে উদযাপিত হয়?
সন্ত গরীবদাস জীর “পবিত্র সদগ্রন্থ সাহিব” জীর 5 – 7 দিবসীয় পথ ধারণ করে সন্ত রামপাল জী আধ্যাত্বিক প্রবচন দিয়ে এই উৎসবকে উদযাপন করেন। এই রকম তিনি শুরু থেকেই করে আসছেন। এছাড়া পণ মুক্ত বিবাহ, রক্তদান আর শরীরদান শিবির, ভান্ডারা, সত্য আধ্যাত্মিক জ্ঞান -এর বিষয়ে জাগ্রত আর আধ্যাত্মিক ভন্ডামীর বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রকট দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য।
পণ মুক্ত বিবাহ : রমৈণী
হাজার হাজার পণমুক্ত বিবাহ রমৈণীতে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে সম্পন্ন হয়। বিভিন্ন ধর্ম, রাষ্ট্র আর জাতির বর-বধূরা এক পয়সা দেওয়া-নেওয়া ছাড়া বিবাহ করে। পাত্র-পাত্রী অত্যন্ত সাধারণ বস্ত্র পরিধান করে বিবাহ করে। পাত্র এবং পাত্রীর সাথে আগত অতিথিদেরকে ভান্ডারাতে-ই ভোজন খাওয়ানো হয়।
রমৈণী বিবাহ করার উদ্দেশ্য হল বিবাহের পণ এবং অপ্রয়োজনীয় খরচের মত সামাজিক কু-রীতি সমাপ্ত করা।
রক্তদান আর দেহ দান শিবির
প্রতি বছর কবীর সাহেব প্রকট দিবস এর মাধ্যমে রক্তদান আর শরীর দান শিবিরের আয়োজিত করা হয়, যেখানে হাজার হাজার লোক স্বেচ্ছায় রক্তদান করে আর মানবতার কল্যাণ -এর জন্য মৃত্যু পর শরীর দান করার জন্য নাম নথিভুক্তকরণ করায়।
নিঃশুল্ক ভোজন বিতরণ
সন্ত রামপাল জী মহারাজের দ্বারা আয়োজিত কবীর সাহিব প্রকট দিবসে ভান্ডারাতে সমস্ত ভোজন সামগ্ৰী শুদ্ধ দেশি ঘি ব্যবহার করে বানানো হয়। ভোজনে কিছু মিষ্টান্ন শামিল হয় যেমন লাড্ডু,জেলেবি,অথবা বোঁদে প্রসাদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকারের সবজি আর পুরি, রায়তা, আচার আর স্যালাড। এই ভন্ডারা সবার জন্য নিঃশুল্ক।
বাস্তবিক আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে সমাজকে জাগ্রত করা
সন্ত রামপাল জী মহারাজের আধ্যাত্মিক প্রবচন সর্বদা কবীর প্রকট দিবসের মুখ্য অঙ্গ। সতগুরু রামপাল জী মহারাজের আধ্যাত্বিক প্রবচন প্রত্যেক ধর্মের পবিত্র শাস্ত্রের উপর আধারিত। তিনি ভক্ত সমাজকে বাস্তবিক আধ্যাত্মিক জ্ঞান এর বিষয়ে বলার জন্য প্রজেক্টরের মাধ্যমে পবিত্র পুস্তক দেখান। কবীর প্রকট দিবসের মাধ্যমে,ভগবান কবীর জীর মহিমা আর আনুমানিক 600 বছর আগে কাশীতে ওনার একশো কুড়ি বছরের লম্বা প্রবাস -এর উপর ধ্যান কেন্দ্রিত করা হয়।
ধার্মিক ভণ্ডামির বিরুদ্ধে সচেতনতার প্রসার
যেমন উপরে লেখা হয়েছে যে 12 -টি পন্থ আছে এবং অন্য আরো পন্থও আছে। তার মধ্যে কিছু পন্থ-কে কবীর পন্থও বলা যেতে পারে, অন্য নয়। অনেক আলাদা- আলাদা ধর্ম আছে যেখানে পবিত্র গ্রন্থ অনুসারে পূজার পদ্ধতি অনুসরণ করে না। পরিণাম স্বরুপ, ওই সকল ধর্ম অথবা পন্থের অনুগামীদের মধ্যে কেউ কবীর ভগবানের নিকট থেকে লাভ প্রাপ্ত করতে পারে না। ভগবান কবীর জী স্বয়ং সন্ত রামপাল জীর রুপে এসেছেন। সন্ত রামপাল জী বর্তমানে চলমান প্রত্যেক ধার্মিক ভন্ডামির পর্দা ফাঁস করেছেন আর পবিত্র গ্রন্থ থেকে আধ্যাত্মের প্রকৃত রাস্তা দেখিয়েছেন। ওনার আদেশে, ওনার ভক্ত কবীর সাহিব প্রকট দিবস উপলক্ষ্যে আধাত্মিক জ্ঞানের প্রচার করে।
আমরা প্রতি বছর কবীর প্রকট দিবস কেন উদযাপন করি?
ভগবান কবীর জীর বলা সত্যিকারের পূজা বিধি সমস্ত কষ্টের সমাপ্ত করে। পরমেশ্বর কবীর জী স্বয়ং সর্বোচ্চ পরমেশ্বর। তিনি যা চান,তাই করতে পারেন। এখানে কাশীতে একশো কুড়ি বছর প্রবাস কালে তিনি অনেক লোকের রোগ ঠিক করেছেন। তিনি নিজের 64 লাখ ভক্তের কষ্ট দূর করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পূর্ণ মোক্ষ প্রাপ্ত করার জন্য বাস্তবিক মন্ত্র দিয়েছেন। ভগবান কবীর জীর এখানে প্রকট হওয়ার উৎসব উদযাপনে, এর থেকে ভালো কারণ আর কি হতে পারে।
কবীর জী, গরীব দাস জী কে সত্যজ্ঞান দিয়েছিলেন
ভগবান কবীর জী মাঝে মাঝে এসে নিজের প্রিয় আত্মাদের দেখা দেন, ওনাদেরকে সত্য জ্ঞান দেন। ভগবান কবীর জী সন্ত গরীব দাস জী-কে দেখা দিয়েছিলেন। কবীর পরমেশ্বর জী সন্ত গরীব দাস জী-কে বলেছিলেন,
মৈঁ রোবত হুঁ সৃষ্টি কো, য়ে সৃষ্টি রোবে মোহে।
গরীবদাস ইস বিয়োগ কো, সমঝ ন সকতা কোয়ে।।
এই বাণীতে সন্ত গরীব দাস জী বলছেন যে, কবীর পরমেশ্বর জী বলেছেন – হে গরীব দাস! আমি দুনিয়ার জন্য কাঁদি, যে তোমরা সবাই আমার বাচ্চা। আমি তোমাদের পিতা। তোমরা এই খারাপ কাল লোকে নিজেদের ভুলের কারণে চলে এসেছো। তোমরা এখানে পীড়িত। তোমরা আমার উপদেশ অনুসারে পূজা করো আর নিজের মূল স্থান সতলোকে চলে যাও, যেখানে কোন দুঃখ নেই।
আর, এই দুনিয়াও আমার জন্য কাঁদে, যে হে ভগবান! আপনি সর্বশক্তিমান, নির্মাতা, সবার পালনহার। কৃপা করে আমাদেরকে খুশী রাখুন। কৃপা করে আমাদের কষ্ট দূর করুন। আমরা আপনার ভক্তি, পূজা করি আপনি আমাদেরকে দর্শন কেন দিচ্ছেন না?
কিন্তু, যখন আমি ওদের নিকটে যাই আর ওদেরকে বলি, যে আমিই ভগবান। তারপরও ঈশ্বর নিরাকার হওয়ার এই নিরাধার বিশ্বাসে দৃঢ় হয়ে আমাকে বিশ্বাস করে না। এই কাল আমাদের মধ্যে অজ্ঞানতার দেওয়াল খাড়া করে দিয়েছেন। এই বিচ্ছেদ কেউ বুঝতে পারে না।
এই বিচ্ছেদ বোঝার জন্য তৃতীয় ব্যক্তির প্রয়োজন। সেই তৃতীয় ব্যক্তি হলেন একমাত্র সৎগুরু, যিনি ঈশ্বরকে নিজের আত্মাদের সঙ্গে যুক্ত করান। সন্ত রামপাল জী মহারাজ জী আজ একমাত্র সতগুরু। তিনি স্বয়ং কবীর জীর অবতার। উনি সেই প্রকার আধ্যাত্মিক জ্ঞান বলেন এবং সেই মতো পূজার উপদেশ দেন, যেমন কবীর পরমাত্মা। এর প্রমাণ তিনি পবিত্র *কবীর সাগর* থেকেও দেন।
কবীর পরমেশ্বর জী-র আরাধনা সমস্ত ধরনের কষ্ট দূর করে। সন্ত রামপাল জী, কবীর পরমেশ্বরের শাস্ত্র আধারিত উপাসনা করার বিধি বলেন। যার ফলস্বরূপ, ওনার হাজার হাজার ভক্তের অন্তিম পর্যায় এর ক্যান্সার এবং এডস -এর মত ঘাতক রোগ ও ঠিক হয়েছে। ভুত-প্রেত ওনার ভক্তদের ক্ষতি করতে পারে না। তাদের সমস্ত ধরনের কষ্ট সমাপ্ত হয়ে যায়। সন্ত রামপাল জী মহারাজের থেকে দীক্ষা নেওয়া ব্যক্তির অকাল মৃত্যু হয় না। শুধুমাত্র, পূজার নিয়ম গুলি কে পালন করা অধিক মহত্বপূর্ণ।
সন্ত রামপাল জী বলেন যে, যদি আমরা ওনার বলা সব নিয়মের পালন করতে করতে আর ওনার দেওয়া পূজার বিধি করি, তো ক্যান্সার কেন ? ক্যান্সারের বাপ্ হলেও ঠিক হবে! ওনার ভক্তদের এই সাক্ষ্য, এর জল-জ্যান্ত প্রমাণ। এই জন্যে এবার ভগবান -কে চিনতে বিন্দুমাত্র দেরি করবেন না। ওনার জ্ঞানের সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করান। সন্ত রামপাল জী মহারাজ জীর শরণ গ্রহণ করুন আর নিজের কল্যাণ করান।