সন্ত গরীব দাসজীর জন্ম হয়েছিল ১৭১৭ সালে ( বিক্রমি সংবত ১৭৭৪) হরিয়ানা রাজ্যের, ঝজ্জর জেলার অন্তর্গত ছুড়ানী গ্রামে। এই ছুড়ানী গ্রামটিতে ছিল গরীব দাসজী মহারাজের মামা বাড়ি। প্রকৃতপক্ষে গরীব দাসজী মহারাজ করৌঁথা গ্রামের (জেলা:- রোহতক, হরিয়ানা রাজ্য) অন্তর্গত ধনখড় গোত্রের নিবাসী ছিলেন। এনার পিতা শ্রী বলরামজী-র বিবাহ ছুড়ানী গ্রামের বাসিন্দা শ্রী শিবলাল সিহাগ মহাশয়ের একমাত্র কন্যা রানী দেবীর সাথে হয়েছিল। শ্রী শিবলালজীর কোন পুত্র ছিল না, এইজন্যে শ্রী বলরামজী কে ঘরজামাই রেখেছিলেন। ছুড়ানী গ্রামে থাকতে থাকতে ১২ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর সন্ত গরীব দাসজী মহারাজের জন্ম হয়েছিল। শ্রী শিবলালজী-র কাছে ২৫০০ বিঘা ( বেশি মাপের বিঘা যা বর্তমান বিঘা থেকে ২.৭৫ গুণ বড় ছিল) জমি ছিল। যা বর্তমানে প্রায় চৌদ্দশ একর জমি হয় (২৫০০×২.৭৫/৫ = ১৩৭৫ একর) এই সমস্ত জমির ওয়ারিশ (মালিকানা) পেয়ে যান শ্রী বলরামজী। তথা পরবর্তীকালে উনার একমাত্র পুত্র সন্ত গরীবদাসজী ওই সমস্ত জমির মালিক হয়ে যান। ওই সময় অধিক পশুপালন করা হতো। বলরামজী ১৫০টি গরু রেখেছিলেন। গরুগুলোকে চরানোর জন্য নিজের পুত্র গরীব দাসজীর সাথে সাথে আরো কয়েকজন গো-চারক-কে (অর্থাৎ, রাখাল) ভাড়ায় রেখেছিলেন। তারাও গরুগুলোকে চরানোর জন্য মাঠে নিয়ে যেতেন।
যে সময় সন্ত গরীব দাসজী ১০ বছর বয়সী হয়ে গিয়েছিলেন, তখন তিনিও গরু চরানোর জন্য অন্য গো-চারকদের (রাখালদের) সাথে নলা নামক মাঠে গিয়েছিলেন। ফাল্গুন মাসের শুক্লা পক্ষের দ্বাদশী তিথিতে প্রায় সকাল ১০ টা নাগাদ পরম অক্ষর ব্রহ্ম একজন জিন্দা মহত্মার বেশ ধারণ করে এসে সাক্ষাৎকার ও দর্শন দেন। নলা মাঠটি কবলানা গ্রামের সীমা বরাবর ছিল। সকল গো-চারকেরা একটি জান্ডি গাছের নিচে বসে খাবার খাচ্ছিল।
এই গাছটি কবলানা গ্রাম থেকে ছুড়ানী গ্রামের দিকে যাওয়ার রাস্তার পাশে ছিল। বর্তমানে সরকার ওই রাস্তাটিতে পাকা সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছেন। পরমেশ্বরজী সৎলোক থেকে এসে ওই গাছটি থেকে কিছু দূরে রাস্তার উপর অবতীর্ণ হলেন এবং রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কবলানা থেকে ছুড়ানী গ্রামের দিকে আসতে লাগলেন। যখন গো-চারকদের নিকটে আসলেন, তখন গো-চারকেরা বললেন বাবাজি আদেশ! রাম রাম! পরমেশ্বরজী বললেন, রাম রাম! গো-চারকেরা বললেন বাবাজি ভোজন গ্রহণ করুন। তখন পরমেশ্বর জী বললেন, ভোজন তো আমি আমার গ্রাম থেকে করেই বেরিয়েছিলাম। গো-চারকেরা বললেন মহারাজ! ভোজন গ্রহণ করবেন না তো দুধ তো অবশ্যই পান করতে হবে। আমরা অতিথিকে কিছু না খাইয়ে যেতে দিতে পারি না। পরমেশ্বরজী বললেন ঠিক আছে আমাকে দুধ পান করাও কিন্তু শোনো! আমি কুমারী গাইয়ের দুধ পান করি। গো-চারকদের মধ্যে যিনি বেশি বয়সী ছিলেন, উনি বললেন, আপনি তো মজা করছেন, আপনার তো দুধ পান করার যে সময় সন্ত গরীব দাসজী ১০ বছর বয়সী হয়ে গিয়েছিলেন, তখন তিনিও গরু চরানোর জন্য অন্য গো-চারকদের (রাখালদের) সাথে নলা নামক মাঠে গিয়েছিলেন। ফাল্গুন মাসের শুক্লা পক্ষের দ্বাদশী তিথিতে প্রায় সকাল ১০ টা নাগাদ পরম অক্ষর ব্রহ্ম একজন জিন্দা মহত্মার বেশ ধারণ করে এসে সাক্ষাৎকার ও দর্শন দেন। নলা মাঠটি কবলানা গ্রামের সীমা বরাবর ছিল। সকল গো-চারকেরা একটি জান্ডি গাছের নিচে বসে খাবার খাচ্ছিল।
এই গাছটি কবলানা গ্রাম থেকে ছুড়ানী গ্রামের দিকে যাওয়ার রাস্তার পাশে ছিল। বর্তমানে সরকার ওই রাস্তাটিতে পাকা সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছেন। পরমেশ্বরজী সৎলোক থেকে এসে ওই গাছটি থেকে কিছু দূরে রাস্তার উপর অবতীর্ণ হলেন এবং রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কবলানা থেকে ছুড়ানী গ্রামের দিকে আসতে লাগলেন। যখন গো-চারকদের নিকটে আসলেন, তখন গো-চারকেরা বললেন বাবাজি আদেশ! রাম রাম! পরমেশ্বরজী বললেন, রাম রাম! গো-চারকেরা বললেন বাবাজি ভোজন গ্রহণ করুন। তখন পরমেশ্বর জী বললেন, ভোজন তো আমি আমার গ্রাম থেকে করেই বেরিয়েছিলাম। গো-চারকেরা বললেন মহারাজ! ভোজন গ্রহণ করবেন না তো দুধ তো অবশ্যই পান করতে হবে। আমরা অতিথিকে কিছু না খাইয়ে যেতে দিতে পারি না। পরমেশ্বরজী বললেন ঠিক আছে আমাকে দুধ পান করাও কিন্তু শোনো! আমি কুমারী গাইয়ের দুধ পান করি। গো-চারকদের মধ্যে যিনি বেশি বয়সী ছিলেন, উনি বললেন, আপনি তো মজা করছেন, আপনার তো দুধ পান করার ইচ্ছাই নেই, কুমারী গায়ও কি কখনো দুধ দিতে পারে? পরমেশ্বর জী আবারো বললেন, আমি কুমারী গায়ের-ই দুধ পান করবো। বালক গরীব দাসজী তার প্রিয় বাছুরটিকে (যার বয়স ১.৫ বছর ছিল) জিন্দা বাবার কাছে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে দেয়। পরমাত্মা বাছুরটির কোমরে আশীর্বাদ ভরা হাত রেখে দেয়। বাছুরটির স্তন লম্বা লম্বা হয়ে যায় তারপর একটি মাটির পাঁচ কিলোগ্রামের পাত্র নিয়ে বাছুটির স্তনের নিচে রেখে দেয়। সাথে সাথেই বাছুরটির স্তন দিয়ে দুধের ধার পড়তে থাকে। মাটির পাত্রটি ভরে যাওয়ার পর দুধের ধার নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়।
প্রথমে জিন্দা বাবা দুধ পান করে, অবশিষ্ট দুধ অন্য গো-চারকদের (রাখালদের) পান করার জন্য বলেন, তো বেশি বয়সী গো-চারকরা (১০-১২জন রাখলেরা) বলতে লাগে যে, বাবাজি কুমারী গায়ের দুধ তো পাপের দুধ, আমরা পান করব না। দ্বিতীয়ত আপনি না জানি কোন জাতের ? আপনার এঁঠো দুধ আমরা পান করব না। তৃতীয়তঃ আপনি এই দুধ জাদু-যন্ত্র করে বার করেছেন। এটা পান করলে আমাদের উপর জাদু-যন্ত্রের কু-প্রভাব পড়বে। এই কথা বলে যে গাছের নিচে ওরা বসে ছিল, সেখান থেকে উঠে অন্যত্র চলে যায়। তখন বালক গরীব দাসজী বললেন, হে বাবাজি! আপনার এঁঠো দুধ তো অমৃত। আমাকে দিন, এই বলে কিছু দুধ বালক গরীব দাসজী পান করে। জিন্দাবেশ ধারী পরমেশ্বর সন্ত গরীব দাসজীকে জ্ঞান উপদেশ দেন। তত্ত্বজ্ঞান (সুক্ষম বেদের জ্ঞান) বলেন। সন্ত গরীব দাসজীর অধিক আগ্রহ করার কারণে পরমেশ্বর ওনার আত্মাকে শরীর থেকে আলাদা করেন এবং উপরে আকাশ মন্ডল দেখাতে নিয়ে যান। একটা ব্রহ্মাণ্ডে অবস্থিত সর্ব লোক দেখান, শ্রী ব্রহ্মা, শ্রী বিষ্ণু এবং শিবজীর সাথে সাক্ষাৎ করান। তারপর ব্রহ্মলোক এবং শ্রী দেবীর ( দুর্গা) লোক দেখান। তারপর দশম দ্বার ( ব্রম্ভ রন্ধ্র ) পার করে কাল ব্রহ্মের ২১ ব্রহ্মাণ্ডের অন্তিম স্থানে বানানো ১১ তম দ্বার পার করে অক্ষর পুরুষের সাত শঙ্খ ব্রহ্মাণ্ডের লোকে প্রবেশ করে। সন্ত গরীব দাসজীকে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড দেখান, অক্ষর পুরুষের সাথে সাক্ষাৎকার করায়। প্রথমে তো ওর দুটো হাত ছিল, কিন্তু পরমেশ্বরকে নিকটে আসতে দেখে অক্ষর পুরুষ দশ হাজার (১০,০০০) হাত বিস্তার করে নেয়। ঠিক যেমন ময়ূর পাখি নিজের পেখম মেলে ধরে। অক্ষর পুরুষের যখন কোন সংকটের আভাস হয় তখন এমনটা করে। এভাবে নিজের শক্তির প্রদর্শন করে, কারণ অক্ষর পুরুষ অধিক থেকে অধিকতম ১০০০০ হাতই বিস্তার করতে পারে। এর দশ হাজার হাত আছে। ক্ষর পুরুষের এক হাজার হাত আছে।
গীতা অধ্যায় ১০ শ্লোক ১১ তে নিজের দশ হাজার হাতওয়ালা বিরাট রূপ দেখায়। গীতা অধ্যায় ১১ শ্লোক ৪৬ এ অর্জুন বললেন যে – হে সহস্র বাহু ( এক হাজার ভুজাযুক্ত প্রভু) আপনি চতুর্ভুজ রূপে ফিরে আসুন। সন্ত গরীব দাসজীকে অক্ষর পুরুষের সাতশঙ্খ ব্রহ্মাণ্ডের ভেদ বলেন এবং তা স্বচক্ষে দেখিয়ে পরমেশ্বর জিন্দা বাবা দ্বাদশ তম (১২) দ্বারের সামনে নিয়ে যায়, যা অক্ষর পুরুষের লোকের সীমাতে বানানো ছিল। যেখান থেকে ভঁয়র গুহাতে প্রবেশ করা যায়। জিন্দা বেশধারী পরমেশ্বরজী সন্ত গরীব দাসজীকে বলেন যে, যখন আমরা দশম দ্বারে ( ব্রম্ভ রন্ধ্র ) উপস্থিত হয়েছিলাম, তখন তা আমি সত্যনামের জপে খুলেছিলাম। যখন ১১ তম দ্বার আসলো, তখন তা আমি তৎ এবং সত (যা সংকেতিক মন্ত্র) এর দ্বারা খুলেছিলাম। অন্য কোন প্রকার মন্ত্রের দ্বারা ওই দরজায় লাগানো তালা(Locks) খুলতো না। এখন এটি ১২ তম দ্বার, এখানে আমি সত শব্দ (সার নাম) দিয়ে খুলবো। এছাড়া অন্য কোন নামের জপ করলে এটি খুলবে না। তখন পরমাত্মা মনে মনে সার নামের জব করে, সাথে সাথেই ১২ তম দ্বার খুলে যায়। আর জিন্দা রূপধারী পরমেশ্বর এবং সন্ত গরীব দাসজীর আত্মা ভঁয়র গুহাতে প্রবেশ করে।
তারপর সৎলোকে প্রবেশ করে, শ্বেত গম্বুজ এর সামনে দাঁড়িয়ে যায়, যার মধ্যখানে সিংহাসনের ( উর্দুতে তখত বলা হয়) উপর তেজময় শ্বেত নর রূপে পরম অক্ষর ব্রহ্মজী বিরাজমান ছিলেন। যার একটি রোম ( শরীরের লোম) থেকে এতটা প্রকাশ বার হচ্ছিল যে, যা কোটি কোটি সূর্য তথা কোটি কোটি চন্দ্রমার একত্রিত প্রকাশ অপেক্ষা অধিক প্রকাশমান। এর থেকে অনুমান করা যায় যে, ওই পরম অক্ষর ব্রহ্মের (সত্য পুরুষের) সম্পূর্ণ শরীরের প্রকাশ কতটা হতে পারে। সৎলোক স্বয়ং হীরের মতো প্রকাশমান। পরমেশ্বর জীর পবিত্র শরীরের প্রকাশ এবং সৎলোকের প্রকাশ কেবল আত্মার চোখ ( দিব্যদৃষ্টি ) দিয়ে দেখা সম্ভব। চর্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখা যায় না।
তারপর, জিন্দা বাবা নিজের সাথে বালক গরীব দাসজীকে সিংহাসনের নিকট নিয়ে গেলেন এবং সেখানে রাখা চামর তুলে নিয়ে সিংহাসনে বিরাজমান পরমাত্মার উপরে দোলাতে লাগলেন। বালক গরীব দাসজী বিচার করলেন যে ইনিই পরমাত্মা, আর এই বাবা তো পরমাত্মার সেবক। ঠিক ওই তেজময় শরীর যুক্ত প্রভু সিংহাসন ত্যাগ করে উঠে পড়লেন, আর জিন্দা বাবার হাত থেকে চামর নিয়ে নিলেন। তারপর জিন্দা বাবাকে সিংহাসনে বসার জন্য সংকেত করলেন। জিন্দা বেশধারী প্রভু অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ডের মালিকের রূপে সিংহাসনে বিরাজমান হলেন। পূর্বের প্রভু জিন্দা বাবার উপরে চামর করতে লাগলেন।
সন্ত গরীব দাসজী বিচার করছিলেন যে, এনাদের মধ্যে পরমেশ্বর কে হতে পারে? এরই মধ্যে তেজময় প্রভু জিন্দা বাবার শরীরে মিলিয়ে গেলেন, দুজনে মিলে একজন হয়ে যান। এবার জিন্দা বাবার শরীরের প্রকাশ ততটাই হয়ে গেছে যতটা পূর্বে সিংহাসনে বিরাজমান সত্যপুরুষ জীর ছিল, কিছুক্ষণের মধ্যে পরমেশ্বর বললেন হে গরীব দাস! আমি অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ডের স্বামী। আমিই সর্বব্রহ্মাণ্ডের রচনা করেছি। সমস্ত আত্মাকে বচন শক্তি দিয়ে আমিই রচনা করেছি। পাঁচ তত্ত্ব এবং সর্ব পদার্থও আমার রচনা। ক্ষর পুরুষ (ব্রহ্ম) এবং অক্ষর পুরুষের তথা ওদের লোকগুলোও ( ব্রহ্মাণ্ড গুলো ) আমিই উৎপন্ন করেছি। এগুলো এদেরকে তপস্যার বদলে এই সর্ব ব্রহ্মাণ্ডের রাজ্য আমিই প্রদান করেছি। আমি ১২০ বছর ধরে পৃথিবীতে কবীর নামে জোলার (তাঁতির) ভূমিকা করে এসেছি।
ভারতবর্ষের( জম্বু দ্বীপ ) কাশী নগরে (বারাণস) নিরু-নিমা নামে পতি-পত্নী বাস করতেন। এনারা মুসলমান জোলা ছিলেন। এনারা নিঃসন্তান ছিলেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা পক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে ভোরে ( ব্রহ্ম মুহূর্তে ) লহরতলা নামক সরবরে যা কাশি শহরের বাইরে জঙ্গলে ছিল, সেখানে আমি নবজাতক শিশুরূপে (অর্থাৎ, শিশু রূপ ধারণ করে ) পদ্ম ফুলের উপর শুয়েছিলাম, আমি আমার এই স্থান থেকে বিদ্যুৎ সম গতিতে ওখানে গিয়েছিলাম। নীরু জোলা এবং উনার পত্নী প্রতিদিন ওই সরবরে স্নান করতে যেতেন। ঐদিন আমাকে বালক রূপে প্রাপ্ত করে অত্যন্ত খুশি হয়েছিল, আমাকে নিজেদের সাথে ঘরে নিয়ে যায়। আমি ২৫ দিন ধরে কোন আহার গ্রহণ করিনি। তখন শিবজী এক সাধু বেশে ওনাদের ঘরে আসে, তা সবকিছুই আমার প্রেরণা ছিল। শিব জীকে আমি বলেছিলাম যে, আমি কুমারী গায়ের দুধ পান করি, তারপর নিরু একটি বাছুর নিয়ে আসে। শিবকে আমি শক্তি প্রদান করেছিলাম, শিব তার আশীর্বাদ ভরা হাত বাছুরটির কোমরে রেখেছিল। তখন কুমারী গায় দুধ দেয়, তারপর সেই দুধ আমি পান করেছিলাম। আমি প্রত্যেক যুগে এমনই লীলা করে থাকি। যখন যখন আমি শিশু রূপে প্রকট হই, তখন আমি কুমারী গাইয়ের দ্বারা আমার ভরণ পোষণের লীলা করি। হে গরীব দাস! চার বেদ আমারই মহিমার গুনোগান করে।
বেদ মেরা ভেদ হ্যায়, ম্যায় নহীঁ বেদন কে মাঁহী।
জিস বেদ সে ম্যায় মিলুঁ, বহ বেদ জানতে নাহীঁ।।
ঋকবেদ মন্ডল ৯ সুক্ত ১ মন্ত্র ৯-এ লেখা আছে যে, যখন পরমেশ্বর শিশু রূপে পৃথিবীতে প্রকট হন, তখন ওনার পালন পোষণের লীলা কুমারী গাইয়ের দ্বারা হয়ে থাকে। আমি সত্যযুগে “সত্যসুকৃত” নামে প্রকট হয়েছিলাম। ক্রেতা যুগে আমি “মুণীন্দ্র” নামে এবং দ্বাপর যুগে “করুণাময়” নামে আর সংবত ১৪৫৫ এর জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা পক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে কলিযুগে কবীর নামে প্রকট ও প্রসিদ্ধ হয়েছিলাম। এই সমস্ত প্রসঙ্গ শুনে সন্ত গরীব দাসজী বললেন হে পরবরদিগার! এই জ্ঞান আমার কিভাবে স্মরণে থাকবে? তখন পরমেশ্বর জী বালক গরীব দাসজীকে আশীর্বাদ দিলেন আর বললেন, আমি তোমার জ্ঞানযোগ খুলে দিয়েছি। আধ্যাত্মিক জ্ঞান তোমার অন্তঃকরণে ফিট করে দিয়েছি।
এখন থেকে তোমার অসংখ্য যুগের পূর্বের জ্ঞান থেকে শুরু করে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জ্ঞান স্মরণে থাকবে। অন্যদিকে নিচে পৃথিবীতে বিকাল যখন প্রায় ৩-টা বেজে গেছে, তখন অন্য গো-চারকদের স্মরণে আসলো যে গরীব দাস তাদের মধ্যে নেই, বলল ডেকে নিয়ে এসো গরিবুকে (ডাকনাম )। তখন এক গো-চারক যায় আর দূর থেকে ডাক দেয়, হে গরীব দাস! চলে আয়, গরু গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ঠিকমত আছে কিনা দেখে নে। আমরা অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ভক্ত গরীব দাসজী কিছুই বললেন না, আর নাইবা উঠে আসলেন। কারণ পৃথিবীতে কেবলমাত্র তার অসাড় শরীর ছিল, জীবাত্মা তো উপর মন্ডলে ভ্রমণ করছিল। ওই গো-চারকটি কাছাকাছি গিয়ে হাত দিয়ে শরীর নাড়ায়, তখন শরীর মাটিতে লুটিয়ে যায়। পূর্বে সুখাসনে (বসে )স্থির ছিল। গো-চারকটি যখন দেখল, গরীব দাসজীকে মৃত পেল। সাথে সাথেই সে খুব চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো। চিৎকার শুনে অন্য গো-চারকরা দৌড়ে আসলো। তাদের মধ্যে একজন ছুড়ানী গ্রামের দিকে দৌড়ে চলে গেল, ছুড়ানী গ্রাম থেকে কবলানা গ্রামের দিকে এই রাস্তার পাশেই জান্ডি গাছটি ছিল। এই গাছের নিচে পরমেশ্বর জী জিন্দা রূপে গরীব দাসজী এবং অন্যান্য গো-চারকদের সাথে বসে ছিলেন। কবলানা গ্রামের সীমার সাথে এই মাঠটি জুড়ে ছিল। যা ছুড়ানী গ্রামের গরীব দাসজীরদের নিজস্ব মাঠ। এই স্থানটি ছুড়ানী গ্রাম থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ছুড়ানী গ্রামে গিয়ে ওই গো-চারকটি গরীব দাসজীর পিতা-মাতা, দাদু-দিদিমাকে সব ঘটনা বলেন, যে এক বাবাজী এসে কুমারী গায়ের দুধ জাদু-যন্ত্র করে বার করে, ওই দুধ আমরা তো পান করিনি, কিন্তু বালক গরীব দাস পান করে নেয়। আমরা এখন দেখলাম যে ও মরে পড়ে আছে। বাচ্চার মৃতদেহটি চিতার উপরে তুলে অন্তিম সংস্কার করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। ঠিক ওই সময়ে পরমেশ্বর জী বললেন গরীব দাস! তুমি নিচে যাও। তোমার শরীর নষ্ট করে দিতে যাচ্ছে। সন্ত গরীব দাসজী যখন নিচের দিকে দেখলেন, তখন এই পৃথিবী লোক সৎলোকের তুলনায় নরকের মত দেখতে লাগছিল। সন্ত গরীব দাসজী বললেন হে প্রভু! আমাকে নিচে পাঠাবেন না, এখানেই থাকতে দিন। তখন সত্যপুরুষ কবীরজী বললেন, আমি যে সাধনা তোমাকে বলবো, সেই মতো তুমি প্রথমে ভক্তি করো, সেই ভক্তির শক্তিতে পুনরায় এখানে স্থায়ী স্থান প্রাপ্ত করবে। সামনে দেখো, ওটা তোমার মহল যা খালি পড়ে আছে। সর্ব খাদ্য পদার্থ ভরা রয়েছে। নিচে পৃথিবীতে বর্ষা হলে তবেই অন্য হবে। কতটা পরিশ্রম করতে হয়। এখানকার মতো পদার্থ পৃথিবীতে কোথাও নেই। তুমি নিচে যাও। প্রথম মন্ত্র আমি তোমাকে দিয়ে দিয়েছি। এরপর সতনাম দেওয়ার জন্য আমি আবার আসব। এই সৎনাম দুটি অক্ষরের হয়, এক ‘ওঁ’ অক্ষর অন্যটি ‘তত্’ (এটি সংকেতিক) অক্ষর। তার কিছুদিন পর তোমাকে সারনাম দেব। এই সকল নামের ( প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়) সাধনা করে তুমি পুনরায় এখানে আসতে পারবে। আমি সর্বদা ভক্তদের সাথে থাকি, তুমি চিন্তা করো না। এখন তুমি শীঘ্র যাও।
এতটাই বলে পরম অক্ষর পুরুষজী সন্ত গরীব দাসজীর জীবাত্মাকে শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে দেয়। পরিবার-পরিজনেরা চিতাতে অগ্নি লাগাতে যাবে, এমন সময় বাচ্চার শরীর নড়ে চড়ে উঠলো। দড়ি দিয়ে বেঁধে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হত, সেই দড়িও নিজে থেকেই ছিঁড়ে যায়। সন্ত গরীব দাসজী উঠে চিতার উপরে বসে পড়ে, তারপর নিচে নেমে দাঁড়িয়ে যায়। উপস্থিত গ্রামের এবং পরিবারের লোকেদের খুশির ঠিকানা ছিল না। বালক গরীব দাস উপরের দিকে চোখ করে পরমাত্মাকে দেখছিলেন তথা যে অমৃতজ্ঞান পরমেশ্বর জী ওনার অন্তঃকরণে ফিট করে দিয়েছিলেন, সেই অমৃত বাণী দোঁহা, চৌপাইয়া এবং শব্দের রূপে বলতে লাগলেন। গ্রামের লোকেরা ওই অমৃত বাণীর জ্ঞান বুঝতে পারেনি, এজন্যে তারা ভাবল যে বাচ্চাকে বাবাজী পাগল করে দিয়েছে, যার জন্য এ বিড়বিড় করছে। যা মনে আসে তাই বলতে থাকছে। তবুও সবাই পরমাত্মার জয় জয় কার লাগাচ্ছিল, কেননা মায়ের কোলের সন্তান জীবিত তো হয়ে গেছে। পাগল হলেও তো মাতা রানী দেবী নিজের মনকে সান্তনা দিয়ে খুশি থাকবে। এই বুঝে মহাপুরুষ গরীব দাসজীকে গ্রামবাসীরা পাগল ( গ্রামের ভাষায় বাওলিয়া) বলে ডাকতে লাগে।
এই ঘটনার তিন বছর পরে, একদিন ছুড়ানী গ্রামে গোপাল নামক এক সন্ত আসলেন। যিনি দাদু দাসজী-র পন্থ থেকে দীক্ষিত ছিলেন। উনি সাধু-সন্তদের বাণীর অর্থ বুঝতেন, সেগুলোর মহত্ব সম্পর্কে জানতেন। উনি বৈশ্য বর্ণের এবং সাধুসন্তের বেশভূষায় থাকতেন। বণিকদের ঘরে জন্ম হওয়ার কারণে উনি কিছু পড়ালেখাও জানতেন। গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন। বেশিরভাগ সময় ভ্রমণ করতে থাকতেন। গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচার প্রসার করতেন। কিছু শিষ্যও বানিয়ে রেখেছিলেন। উনারই এক বৈরাগী জাতীর শিষ্য এই ছুড়ানী গ্রামেই বসবাস করতেন। উনি তার ঘরেই উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই শিষ্য সন্ত গোপাল দাসজীকে বললেন, হে গুরুদেব! আমাদের গ্রামের চৌধুরী বাবুর নাতিকে (মেয়ের ছেলেকে) কোন সাধু বাবা জাদু-যন্ত্র করে পাগল করে দিয়েছে, সে তো মরেই গিয়েছিল, এমনকি চিতাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল। রানী মায়ের ভাগ্য ভালো ছিল, তাই বাচ্চা জীবিত হয়ে যায় কিন্তু পাগল হয়ে গেছে। সব জায়গার ঝাড়-ফুঁক করা ওঝাদের দেখানো হয়েছিল এমনকি পাগলামি দূর করার ওষুধপত্রও অনেক খাওয়ানো হয়েছিল, কিন্তু কোন কিছুতেই কোন লাভ হয়নি। ওই শিষ্য আরো সমস্ত ঘটনা বলেছিল, যেমন কুমারী গায়ের দুধ বার করে বালক গরিব দাসজীকে খাওয়ানোর ঘটনা সহ সবকিছু। তারপর ওই শিষ্য বলে, কথায় বলে যে সাধু-সন্তের বিদ্যা সাধু-সন্তই কাটতে পারে, কিছু কৃপা করুন গুরুদেব! তারপর গুরুদেব বললেন ডাকো ছেলেকে। কথামতো শিষ্যটি চৌধুরী শিবলালজীর কাছে গিয়ে বললেন, আমার ঘরে এক বাবাজি এসেছেন, আমি উনাকে আপনার নাতি গরীব দাসের বিষয়ে বলেছি। বাবাজি বললেন, এক্ষুনি একবার ডাকো ঠিক হয়ে যাবে। একবার দেখিয়ে নিন, এখনতো গ্রামেতেই বাবা চলে এসেছে, অনেক নামডাক আছে সন্ত জীর।
শিবলালজীর সাথে গ্রামের আরো অন্য ব্যক্তিরাও বাবাজির কাছে গেলেন। সাথে করে বালক গরীব দাসজীকেও নিয়ে গেলেন। সন্ত গোপাল দাসজী বালক গরীব দাসজীকে প্রশ্ন করলেন পুত্র! সে কোন বাবা ছিল? যে তোমার জীবন বর্বাদ করে দিয়েছে। প্রিয় পাঠকগণকে এখানে এটা বলা অনিবার্য যে, সন্ত গোপাল দাসজী ‘সন্ত দাদু দাসজীর’ পন্থ থেকে দীক্ষিত ছিলেন। সন্তু দাদু দাসজিকেও সন্ত গরীব দাসজীর মতো ৭ বছর বয়সে ( অন্য একটি পুস্তকে ১১ বছর বয়সে জিন্দা বাবা দর্শন দিয়েছিলেন। আমাদেরকে জ্ঞান বুঝতে হবে। তাই ব্যর্থ তর্ক-বিতর্কে যাবো না ) জিন্দা বাবার বেশে পরমেশ্বর কবীরজী সাক্ষাৎকার ও দর্শন দিয়েছিলেন। সন্ত দাদুজীকেও পরমেশ্বর শরীর থেকে আত্মা আলাদা করে সতলোকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সন্ত দাদুজী তিন দিন-রাত অচৈতন্য অবস্থায় পড়েছিলেন। তৃতীয় দিনের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন বলেছিলেন, আমি কবীর পরমেশ্বরের সাথে অমর লোকে গিয়েছিলাম। উনি আলম বড়া কবীর সকলের সৃষ্টিকর্তা। আরো বললেন :-
জিন মুঝকো নিজ নাম দিয়া, সোই সতগুরু হমার।
দাদু দুসরা কোই নহীঁ, কবীর সিরজন হার।।১
দাদু নাম কবীর কী, জৈ কোই লেবে ঔট।
ঊনকো কবহু লাগে নহীঁ, কাল বজ্র কী চোট।।২
অব হী তেরী সব মিটৈ, কাল কর্ম কী পীড়(পীর)।
শ্বাস-উশ্বাস সুমরলে, দাদু নাম কবীর।।৩
কেহরী নাম কবীর কা, বিষম কাল গজরাজ।
দাদু ভজন প্রতাপ সে ভাগে সুনত আওয়াজ।।৪
এইভাবে দাদুজীর গ্রন্থে বাণী লেখা আছে। গোপাল দাস এই কথা জানতেন যে, দাদুজীকে বুড়ো বাবা রূপে পরমাত্মা দর্শন দিয়েছিলেন। দাদুজী মুসলমান তেলি জাতির ছিলেন। এজন্য মুসলমান সমাজ কবীর কথার অর্থ বড় করে দিয়েছে। সে কারণে কাশি নিবাসী জোলা কবীরকে পরমাত্মা মানতেন না। দাদু পন্থীরা বলে যে কবীরের অর্থ বড় ভগবান আল্লাহ কবীর = আল্লাহ কবীর।।
এইভাবে শ্রী নানক দেবজী সুলতানপুর শহরের নিকটে বয়ে যাওয়া বেঈ নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। তখন পরমাত্মা জিন্দা বাবা রূপে উনাকে দর্শন দিয়েছিলেন। উনাকেও তিনদিন ধরে নিজের সাথে রেখেছিলেন। স্বচ্ছখণ্ডে ( সতলোকে) নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর আবার পুনরায় ফিরিয়ে এনেছিলেন। আব্রাহাম সুলতান অধম নামে বলখ বুখার শহরে এক রাজা ছিল। ইরাক দেশে বসবাসকারী ওই রাজাকেও পরমাত্মা জিন্দা বাবার রূপে এসে সাক্ষাৎকার ও দর্শন দিয়েছিলেন। তাঁকেও কবীর পরমেশ্বরজী উদ্ধার করেছিলেন।
সন্ত গোপাল দাস বাচ্চা গরীব দাসকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, কোন বাবা তোর কাছে এসেছিল? যে তোর জীবন বর্বাদ করে দিয়েছে। সন্ত গরীবদাস জী উত্তর দিয়েছিলেন, হে মহত্মা জী! যে বাবা আমাকে দর্শন দিয়েছিলেন, তিনি আমার কল্যাণ করে দিয়েছেন, আমার জীবন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। উনি পূর্ণ পরমাত্মা ছিলেন।
গরীব, হম সুলতানী নানক তারে, দাদু কুঁ উপদেশ দিয়া।
জাতি জুলাহা ভেদ নহীঁ পায়া, কাশী মাহে কবীর হুয়া।।১
গরীব, অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ড কা এক রতী নহীঁ ভার।
সতগুরু পুরুষ কবীর হ্যায়, কূল কে সিরজন হার।।২
গরীব, সব পদবী কে মূল হ্যায়, সকল সিদ্ধি হ্যায় তীর।
দাস গরীব সত্ পুরুষ ভজো অবিগত কলা কবীর।।৩
গরীব, অজব নগর মেঁ লে গয়ে, হমকো সতগুরু আন।
ঝিলকে বিম্ব অগাদ গতি সুতে চাদর তান।।৪
গরীব, শব্দ স্বরূপী উতরে, সতগুরু সত কবীর।
দাস গরীব দয়াল হ্যায়, ডিগে বন্ধাবে ধীর।।৫
গরীব, অলল পঙ্খ অনুরাগ হ্যায়, সুন মণ্ডল রহ থীর।
দাস গরীব উধারিয়া, সতগুরু মিলে কবীর।।৬
গরীব, প্রপটন বহ লোক হ্যায়, জহাঁ অদলী সতগুরু সার।
ভক্তি হেত সে উতরে, পায়া হম দিদার।।৭
গরীব, এস্যা সতগুরু হম মিল্যা, হ্যায় জিন্দা জগদীশ।
সুন্ন বিদেশী মিল গয়া, ছত্র মুকুট হ্যায় শীশ।।৮
গরীব, জম জৌরা জাসে ডরেঁ, ধর্মরায় ধরৈ ধীর।
এস্যা সতগুরু এক হ্যায়, অদলী অসল কবীর।।৯
গরীব, মায়া কা রস পীয় কর, হো গয়ে ডামাডোল।
এস্যা সতগুরু হম মিল্যা, জ্ঞান যোগ দিয়া খোল।।১০
গরীব, জম জৌরা জাসে ডরেঁ, মিটেঁ কর্ম কে লেখ।
অদলী অসল কবীর হ্যায়, কূল কে সদগুরু এক।।১১
সন্ত গরীব দাসজীকে কোন বাবা দর্শন দিয়েছিলেন? বাবাজি কে তাঁর পরিচয় দিলেন। যা উপরে লেখা বাণীতে সন্ত গরীব দাসজী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যে পরমেশ্বর কবীর জী আমাদের সবাইকে – গরীব দাস, সন্ত দাদু দাস, সন্ত নানক দেব এবং রাজা আব্রাহিম সুলতানী প্রভৃতিকে পার করেছেন। তিনি ভারতবর্ষের কাশী শহরে কবীর জোলা নামে প্রসিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সৃজন হার। তিনি আমাকে দর্শন দিয়েছিলেন। এই উপরোক্ত বাণীগুলি বলে ১৩ বর্ষীয় বালক গরীবদাস জী উঠে চলে যায়। সন্ত গোপাল দাসজী বুঝে যায় যে, এ সাধারণ বাচ্চা নয়। এ-তো পরমাত্মার সাথে সাক্ষাৎকার করে এসেছে। এমন অমৃত বাণী বলছে, এই বাণী তো লেখা উচিত।
এই বিচার করে বালক গরীব দাসজীর পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন হে গ্রামবাসি! এই বালক পাগল নয়, পাগল তো তোমরা। এ কি বলছে, তা তোমরা বুঝতে পারোনি। আমি বুঝতে পেরেছি, এই বাচ্ছা তো প্রভুর অবতার। একে তো জিন্দা বাবার রূপে স্বয়ং ভগবান দর্শন দিয়েছিলেন। একই রকম ভাবে আমার পূজ্য দাদু সাহেব জীকেও দর্শন দিয়েছিলেন। দাদুজীর সমস্ত বাণী লেখা হয়নি। এখন এই বালকের সমস্ত বাণী লিপিবদ্ধ করাবো, আমি স্বয়ং লিখব। এই বাণী কলিযুগে অনেক জীবের কল্যাণ করাবে। সন্ত গোপাল দাসজীর বার-বার আগ্রহ করার কারণে, সন্ত গরীবদাস জী বললেন গোপাল দাস জী! যদি সম্পূর্ণ বাণী লেখ, তাহলে আমি লেখাব; অন্যতায় মাঝখানে ছেড়ে দিলে আমি লেখাবো না।
এইভাবে শ্রী নানক দেবজী সুলতানপুর শহরের নিকটে বয়ে যাওয়া বেঈ নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। তখন পরমাত্মা জিন্দা বাবা রূপে উনাকে দর্শন দিয়েছিলেন। উনাকেও তিনদিন ধরে নিজের সাথে রেখেছিলেন। স্বচ্ছখণ্ডে ( সতলোকে) নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর আবার পুনরায় ফিরিয়ে এনেছিলেন। আব্রাহাম সুলতান অধম নামে বলখ বুখার শহরে এক রাজা ছিল। ইরাক দেশে বসবাসকারী ওই রাজাকেও পরমাত্মা জিন্দা বাবার রূপে এসে সাক্ষাৎকার ও দর্শন দিয়েছিলেন। তাঁকেও কবীর পরমেশ্বরজী উদ্ধার করেছিলেন।
সন্ত গোপাল দাস বাচ্চা গরীব দাসকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, কোন বাবা তোর কাছে এসেছিল? যে তোর জীবন বর্বাদ করে দিয়েছে। সন্ত গরীবদাস জী উত্তর দিয়েছিলেন, হে মহত্মা জী! যে বাবা আমাকে দর্শন দিয়েছিলেন, তিনি আমার কল্যাণ করে দিয়েছেন, আমার জীবন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। উনি পূর্ণ পরমাত্মা ছিলেন।
গরীব, হম সুলতানী নানক তারে, দাদু কুঁ উপদেশ দিয়া।
জাতি জুলাহা ভেদ নহীঁ পায়া, কাশী মাহে কবীর হুয়া।।১
গরীব, অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ড কা এক রতী নহীঁ ভার।
সতগুরু পুরুষ কবীর হ্যায়, কূল কে সিরজন হার।।২
গরীব, সব পদবী কে মূল হ্যায়, সকল সিদ্ধি হ্যায় তীর।
দাস গরীব সত্ পুরুষ ভজো অবিগত কলা কবীর।।৩
গরীব, অজব নগর মেঁ লে গয়ে, হমকো সতগুরু আন।
ঝিলকে বিম্ব অগাদ গতি সুতে চাদর তান।।৪
গরীব, শব্দ স্বরূপী উতরে, সতগুরু সত কবীর।
দাস গরীব দয়াল হ্যায়, ডিগে বন্ধাবে ধীর।।৫
গরীব, অলল পঙ্খ অনুরাগ হ্যায়, সুন মণ্ডল রহ থীর।
দাস গরীব উধারিয়া, সতগুরু মিলে কবীর।।৬
গরীব, প্রপটন বহ লোক হ্যায়, জহাঁ অদলী সতগুরু সার।
ভক্তি হেত সে উতরে, পায়া হম দিদার।।৭
গরীব, এস্যা সতগুরু হম মিল্যা, হ্যায় জিন্দা জগদীশ।
সুন্ন বিদেশী মিল গয়া, ছত্র মুকুট হ্যায় শীশ।।৮
গরীব, জম জৌরা জাসে ডরেঁ, ধর্মরায় ধরৈ ধীর।
এস্যা সতগুরু এক হ্যায়, অদলী অসল কবীর।।৯
গরীব, মায়া কা রস পীয় কর, হো গয়ে ডামাডোল।
এস্যা সতগুরু হম মিল্যা, জ্ঞান যোগ দিয়া খোল।।১০
গরীব, জম জৌরা জাসে ডরেঁ, মিটেঁ কর্ম কে লেখ।
অদলী অসল কবীর হ্যায়, কূল কে সদগুরু এক।।১১
সন্ত গরীব দাসজীকে কোন বাবা দর্শন দিয়েছিলেন? বাবাজি কে তাঁর পরিচয় দিলেন। যা উপরে লেখা বাণীতে সন্ত গরীব দাসজী স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যে পরমেশ্বর কবীর জী আমাদের সবাইকে – গরীব দাস, সন্ত দাদু দাস, সন্ত নানক দেব এবং রাজা আব্রাহিম সুলতানী প্রভৃতিকে পার করেছেন। তিনি ভারতবর্ষের কাশী শহরে কবীর জোলা নামে প্রসিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সৃজন হার। তিনি আমাকে দর্শন দিয়েছিলেন। এই উপরোক্ত বাণীগুলি বলে ১৩ বর্ষীয় বালক গরীবদাস জী উঠে চলে যায়। সন্ত গোপাল দাসজী বুঝে যায় যে, এ সাধারণ বাচ্চা নয়। এ-তো পরমাত্মার সাথে সাক্ষাৎকার করে এসেছে। এমন অমৃত বাণী বলছে, এই বাণী তো লেখা উচিত।
এই বিচার করে বালক গরীব দাসজীর পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন হে গ্রামবাসি! এই বালক পাগল নয়, পাগল তো তোমরা। এ কি বলছে, তা তোমরা বুঝতে পারোনি। আমি বুঝতে পেরেছি, এই বাচ্ছা তো প্রভুর অবতার। একে তো জিন্দা বাবার রূপে স্বয়ং ভগবান দর্শন দিয়েছিলেন। একই রকম ভাবে আমার পূজ্য দাদু সাহেব জীকেও দর্শন দিয়েছিলেন। দাদুজীর সমস্ত বাণী লেখা হয়নি। এখন এই বালকের সমস্ত বাণী লিপিবদ্ধ করাবো, আমি স্বয়ং লিখব। এই বাণী কলিযুগে অনেক জীবের কল্যাণ করাবে। সন্ত গোপাল দাসজীর বার-বার আগ্রহ করার কারণে, সন্ত গরীবদাস জী বললেন গোপাল দাস জী! যদি সম্পূর্ণ বাণী লেখ, তাহলে আমি লেখাব; অন্যতায় মাঝখানে ছেড়ে দিলে আমি লেখাবো না। সন্ত গোপাল দাসজী বললেন, মহারাজ! আমি তো ঘর ত্যাগ করে বেরিয়ে এসেছি পরমার্থ আর আত্ম কল্যাণ করানোর জন্য, আমার ৬২ বছর বয়স হয়ে গেছে। আমার জন্য এর থেকে ভাল কাজ আর কিছুই হতে পারে না। আপনি কৃপা করুন। তখন সন্ত গরীব দাসজী এবং সন্ত গোপাল দাসজী বেরী বাগানে এক জান্ডি (হরিয়ানা রাজ্যে এক বিশেষ ছায়া প্রদানকারী গাছ) গাছের নিচে বসে বাণী লিখতে-লেখাতে লাগলেন। ওই বেরি বাগানটিও সন্ত গরীব দাসজী মহারাজের নিজেদের ছিল। ওই সময় ছুড়ানী গ্রামের আশেপাশে বালুকাময় ক্ষেত্র ছিল, যেমনটি রাজস্থানে আছে। ওখানে জান্ডি গাছ অধিক হতো। তারই ছায়া অধিক প্রয়োগ করা হতো। এইভাবে সন্ত গরীবদাস জী, পরমাত্মা থেকে প্রাপ্ত তত্ত্ব জ্ঞান ও স্বচক্ষে দেখা সৎলোকের মহিমা বাণী বলছিলেন, এবং গোপাল দাসজী তা লিপিবদ্ধ করছিলেন। প্রায় ছয় মাস ধরে এই কার্য চলতে থাকে। তারপর যখন-তখন যার সাথে গরীব দাসজী মহারাজের বার্তালাপ হত, তখন উনি বাণীর মাধ্যমে তা বলতেন, সেই সময় উপস্থিত অন্য ব্যক্তিরাও এই বাণী লিপিবদ্ধ করতেন। এই সব কিছু মিলিয়ে এক গ্রন্থ রূপে হাতে লেখা গাঁথা তৈরি হয়ে যায়। সন্ত গরীব দাসজীর সময়কাল থেকেই এই গ্রন্থের পাঠ করা আরম্ভ হয়ে গিয়েছিলো। এটাকে কিছু বছর পূর্বে টাইপ করানো হয়েছিল। এছাড়াও পরমেশ্বর কবীরজী স্বয়ং যে সূক্ষ্মম বেদ নিজের মুখ কমল থেকে বলেছিলেন, সেই অমৃত সাগর (কবীর সাগর) থেকে কিছু বাণী নিয়ে এই গ্রন্থের শেষে লেখা হয়েছে। এই পবিত্র অমৃতবাণীর পুস্তক-কে অমর গ্রন্থ নাম দেওয়া হয়েছে। এখন এই অমৃতবানীর সরলার্থ আরম্ভ করা হচ্ছে।
লেখক তথা সরলার্থ কর্তা :-
(সন্ত) রামপাল দাস
সতলোক আশ্রম
টোহানা রোড, বরবালা। জেলা হিসার (হরিয়ানা)